মেসির হ্যাটট্রিকে সরাসরি বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা

অবশেষে লিওনেল মেসি নামের সেই পরশ পাথরের ছোঁয়ায় ঘুম ভাঙলো আর্জেন্টিনার। স্বাগতিক ইকুয়েডরের বিপক্ষে প্রথমে পিছিয়ে পড়েও মেসির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ৩-১ গোলের ব্যবধানে জিতলো দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। একই সঙ্গে বাদ পড়ার শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে মেসি ম্যাজিকে রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করলো আকাশী-সাদারা।

১৯৭০ সালের পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব থেকে বাদ পড়ার শঙ্কা নিয়ে প্রতিকূল পরিবেশে স্বাগতিক ইকুয়েডরের বিপক্ষে খেলতে নামে নামে আর্জেন্টিনা। প্রতিপক্ষের পাশাপাশি অনুকূলে ছিল না এখানকার আবহাওয়াও। কিন্তু বিপদের সময় জ্বলে উঠলেন এই গ্রহের শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় লিওনেল মেসি। ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ৮০০ মিটার উচ্চতায় রচিত হলো আর্জেন্টিনার অনন্য বিজয় কাব্য।

আর্জেন্টিনার বাঁচা মরার এই লড়াইয়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোল খেয়ে বসে মেসি বাহিনী। খেলার মাত্র ১ মিনিটে গোল করেন ইকুয়েডরের আক্রমণভাগের খেলোয়াড় রোমরিও ইবারা। কিন্তু এর পরই বদলে যায় আর্জেন্টিনার খেলার স্টাইল। দারুণ ছন্দে ডি-মারিয়ার পাসে ১১ মিনিটে ক্ষিপ্র গতিতে গোল পরিশোধ করেন মেসি। আক্রমণের পর আক্রমণ আর ছোট ছোট পাসে তছনছ হয়ে যায় ইকুয়েডরের রক্ষণভাগ। শুরু থেকেই জ্বলে ওঠেন মেসি, মারিয়া আর দিবালারা।

সমতায় আসার পর মেসির একটি দুর্দান্ত চেষ্টা দারুণ দক্ষতার সঙ্গে প্রতিহত করেন ইকুয়েডরের গোলরক্ষক। তবে ব্যবধান বাড়াতে বেশি সময় নেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ২০ মিনিটে আবারও জটলা থেকে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় খানিকটা দূর থেকে গোল উৎসবে মাতেন লিওনেল মেসি। দর্শনীয় এ গোলটি করার পরই গ্যালারিতে মেতে ওঠেন হাজার হাজার আর্জেন্টাইন দর্শক। ২-১ গোলে শেষ হয় প্রথমার্ধ।

দ্বিতীয়ার্ধে আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে মেসি বাহিনী। ছোট ছোট পাসে সময় গড়াতে থাকে। আর্জেন্টিনা কেমন যেন একটু ঝিমিয়ে পড়ে। কিন্তু আবারো জেগে ।ওঠেন 'জাদুকর', ৬২ মিনিটে বাঁ পায়ের জাদুতে পরাস্ত করেন ইকুয়েডরের গোলরক্ষককে। মেসি করে ফেলেন স্মরণীয় এক হ্যাটট্রিক।

ধারাভাষ্যকার বলে উঠলেন, 'হি প্রুভড অ্যাগেইন হোয়াই হি ইজ দ্য বেস্ট ইন দ্য আর্থ। মেসি সেভড আর্জেন্টিনা, মেসি সেভড বিলিয়ন অফ হার্টস।' শেষে আরো কয়েকটি আক্রমণ করলেও গোল পায়নি আর্জেন্টিনা। খেলা শেষ হয় ৩-১ গোলে।

আজকের ভেন্যু ইকুয়েডরের রাজধানী কিটোতে মেসিদের অতীত ইতিহাসটা মোটেও সুবিধার ছিল না। তারওপর টানা কয়েক ম্যাচ জয় না পেয়ে যেন আর্জেন্টিনা যেন ছিল ক্রিকেটের 'নার্ভাস নান্টিজে'। কিটোতে আর্জেন্টিনার জয়ের ঘটনা ছিল ১৬ বছর আগে, সেই ২০০১ সালে। এরপর আর জিততে পারেনি আকাশি সাদারা। মেসি জাদুতে সেই দুঃখ যেন ঘুচালো আর্জেন্টিনা।

গ্রুপের অন্য খেলায় চিলিকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। প্যারাগুয়ে ০-১ গোলে হেরে ভেনেজুয়েলার কাছে। এই গ্রুপের অন্যগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করেছে পেরু-কলম্বিয়া। আর বলিভিয়ার বিপক্ষে ৪-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে জয় পেয়েছে উরুগুয়ে। ফলে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে সরাসরি রাশিয়া বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলো ব্রাজিল, উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। আর পেরুকে বিশ্বকাপে আসতে হলে ওশিয়ানিয়া অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকে হারাতে হবে।