জয়নুল: প্রধান বিচারপতিকে ছুটি নিতে বাধ্য করা হয়েছে

প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগ করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন। মঙ্গলবার সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।

এ ঘটনাকে 'বিচার বিভাগের জন্য নজিরবিহীন' বলে মন্তব্য করে জয়নুল আবেদীন বলেন, ’গতকাল আমরা বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমরা জানতে চেষ্টা করছিলাম যে কেন তিনি ছুটি নিলেন, তাকে কোন চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে কিনা। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। আজ সকালে এসে বিচারপতি দুপুর ১ টায় ছুটির দরখাস্ত দিয়ে কোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।’

জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বিচারপতি আমাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্য আগে তেকেই চিঠি পাঠিয়ে দাওয়াত দিয়েছিলেন। ওনার সঙ্গে আজ আমাদের বসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি দাওয়াত দিয়ে এভাবে ছুটিতে চলে গেলেন। অতীতে এমন ঘটনা আর ঘটেনি।’

তিনি বলেন, ‘এর আগে সাবেক বিচারপতি ফজলুল করিম এভাবে দাওয়াত করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এমন অবস্থায় তিনি হুইল চেয়ারে করে আমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন।’

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা একমাসের ছুটি নেওয়ায় তার অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে কার্যভার পালনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় সোমবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা আজ তার কার্যক্রম শুরু করেছেন।

অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন জোর দিয়ে বলেন, ‘দেশ, জাতি এমনকি সরকার অব্দি জানেন যে, একটি রায়ের পর সরকার তার ওপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছেন যাতে তিনি পদত্যাগ করেন। নিশ্চয়ই তার ওপর ছুটি নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা আশঙ্কা করছি, তিনি ছুটিতে যাননি, ছুটিতে যেতে তাকে বাধ্য করা হয়েছে।’

প্রধান বিচারপতির ছুটি নেওয়ার সঠিক কারণ জানা না গেলে তা জাতির জন্য খুবই দুঃখজনক উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, ‘আমরা বিচারপতির ছুটি নেয়ার সঠিক কারণ জানতে চাই, এর জন্য তাঁর সঙ্গে দেখা করে জানার অধিকার আমাদের রয়েছে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে জরুরি ভিত্তিতে সাক্ষাৎ করা প্রয়োজন।‘

এদিকে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির ওপর কোন চাপ প্রয়োগ করা হয়নি। তিনি ব্যক্তিগত কারণে ছুটি নিয়েছেন।’

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যেহেতু উনি সাংবিধানিক পদে আসীন, তাই নিয়ম মেনেই উনি ছুটি নিয়েছেন। তার পরিবর্তে এখন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিয়া দয়িত্ব পালন করবেন।’

প্রসঙ্গত, গত ১ আগস্ট বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর থেকে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। জাতীয় সংসদেও তার সমালোচনা করা হয়। এরেই মধ্যে প্রধান বিচারপতি গত ১০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরে ছুটিতে ছিলেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরেন।

এরপর গতকাল তিনি অসুস্থতাজনিত কারণে এক মাসের ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে এই বিষয়ে নিশ্চিত করেন।