ঢাবিতে বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়ার নেপথ্যে...

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নামে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হলেও বর্তমানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় নেই এ বিদ্যাপীঠের নাম। এক সময় সম্মান খ্যাতি আর অর্জনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেকে প্রমাণ করলেও ক্রমেই তা হারাতে বসেছে প্রতিষ্ঠানটি। শতবছরের ধারপ্রান্তে দাঁড়িয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিশ্ব র‌্যাংকিংয়েও ঠাঁই নেই ২০০০ হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে।

ফলে দিনি দিন বিদেশি শিক্ষার্থী হারাতে বসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার পিজে হার্টগ হলের তথ্য মতে, ২০০১-২০০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিগত ১৫ বছরে মাত্র ৫৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। আর চলতি শিক্ষাবর্ষে (২০১৭-১৮) ভর্তি হয়নি একজনও।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য কোনো ধরনের নিজস্ব নীতিমালা নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের। শুধুমাত্র শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই তাদের ভর্তি হতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে আলাদা কোন কার্যালয় নেই। তাদের ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয় বৃত্তি শাখায়। কিন্তু ভর্তির বিষয়ে সহায়তা করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা বৃত্তি শাখায় নেই। ফলে ভর্তি হতে এসেই তারা নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয়।

স্যার পিজে হার্টগ হলের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গেলে তারা নানা ধরনের সমস্যা ও অসুবিধার কথা জানিয়েছেন। তবে বেশ ভয়ের সাথেই তারা বলেছেন তাদের নাম এবং পরিচয় যেন গোপন রাখা হয়।

তাদের অভিযোগ, হলটি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি করা হলেও আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা নেই সেখানে। শিক্ষার্থীদের থাকার কথা থাকলেও হলের অর্ধেকেরও বেশি কক্ষে শিক্ষকরা থাকেন। ফলে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা ও স্বাভাবিক চলাফেরার ক্ষেত্রে ‘শিক্ষক’ এমন ভাবনা তাড়া করে বেড়ায়। হলের খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং হলে সীট পেতে হয়রানির কারণে অনেকে বিদেশি শিক্ষার্থী বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন বলেও জানান তারা।

তবে শিক্ষার্থীদের বড় অভিযোগ শ্রেণি কক্ষে পাঠ দানের ভাষা নিয়ে। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বাংলাদেশি হওয়ায় শিক্ষকরা বাংলায় লেকচার দিয়ে থাকেন। এ কারণে পাঠগত সমস্যা অনুভব করেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে মানের প্রশ্নে হতাশায় ভোগেন তারা।

এসব বিষয়ে স্যার পিজে হার্টজ হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. মহিউদ্দীন বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। আমাদের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়েই চলতে হয়। তারপরেও আমরা তাদের সর্বোচ্চ মানের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক মনে করেন, একই সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানোন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঢাবির সুনাম না থাকা, জটিল ভর্তি প্রক্রিয়া, আবাসিক সুযোগ-সুবিধার অভাব, ভাষাগত সমস্যা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে সরকার ও বিশ্ববিদ্যারয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণ না করার ফলে বছরের পর বছর বিদেশি শিক্ষার্থী হারাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য আমাদের এখনো কোন নিজস্ব পরিকল্পনা নেই। তবে ভর্তি প্রক্রিয়ায় জটিলতা থাকলেও তা অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেশ কম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো অনেক ডিপার্টমেন্টে বাংলায় লেকচার দেওয়ার কারণে বিদেশিরা সমস্যার মধ্যে পড়েন। এছাড়া অনেকে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে অভ্যস্ত নন।’

উপাচার্য জানান, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা দিতে না পারলেও আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা রয়েছে। তাদের তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য আগামীতে আলাদা ডেস্ক খোলা হবে বলেও তিনি নিশ্চিত করেছেন।