রাখাইনে লতাপাতা খেয়ে বেঁচে আছে রোহিঙ্গারা...

রাখাইনে সেনা অভিযান থেকে পালিয়ে সাড়ে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। সহিংসতায় নিহত হয়েছে কয়েক হাজার, মিয়ানমারের সরকারি হিসাবে অন্তত পাঁচ’শ। ইতিহাসের ঘৃণ্যতম এই নিধনযজ্ঞের পরেও যেসব রোহিঙ্গা এখনো রাখাইনে অবস্থান করছেন তারা বেঁচে আছেন মূলত লতাপাতা খেয়ে।

'রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে 'সন্ত্রাসীদের' সহযোগিতা করছে জাতিসংঘ' মিয়ানমার সরকারের এমন অভিযোগের মুখে সেখানে সংস্থাটির ত্রাণ তৎপরতা বন্ধ হয়। এরপর সেখানে পৌঁছায়নি খুব একটা ত্রান সহযোগিতা। এমনকি রাখাইনের রাজধানী সিতওয়েতে স্থানীয় রাখাইনরা দুইবার আটকে দিয়েছে রেডক্রসের ত্রাণবহর।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে 'রাখাইনের ইন উ শে কিয়া গ্রামে প্রায় আটশোটি পরিবারে বসবাস ছিল। কিন্তু এখন সেখানে মাত্র একশোর মতো পরিবার আছে। যারা এখনো রয়ে গেছে তাদের লুকোচুরি করেই থাকতে হচ্ছে সেখানে। কারণ সেনা সদস্যরারা সকালে গ্রামে তাদের খুঁজতে আসে। সে সময় বাসিন্দারা জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে এবং রাতে তারা বাড়িতে ফিরে আসে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা শিক্ষক ফোনে বলেন, 'আজ সন্ধ্যায় খাওয়ার মতো কোনও খাবার নেই আমাদের। কিইবা করার আছে? আমরা জঙ্গলের কাছাকাছি থাকি। সেখানে অনেক লতাপাতা আছে; আমরা তাই খাচ্ছি। এরপর একটু পানি সংগ্রহ করছি খাবার জন্য। এভাবেই বেঁচে আছি আমরা। গর্ভবতী স্ত্রী, ছয় সন্তান ও বুড়ো বাবা-মাকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার মতো অবস্থাও নেই।'

রোহিঙ্গা মুসলিমদের পদচারনায় এক সময় মুখর থাকতো মংডু’র মসজিদ, মার্কেট ও স্কুল। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সহিংসতায় পুড়ে যায় গ্রামটি। মংডুর যেসব জায়গায় জনবসতি ছিল সেসব জায়গায় ক্ষুধার্ত কুকুর ছোট ছোট ছাগল খাচ্ছে।

এদিকে অং সান সু চির মুখপাত্র বলছেন, 'রাখাইনে মানবিক সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়াকে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। কোনও এলাকায় যদি ত্রাণ না পৌঁছে থাকে আমাদের সেটা জানানো উচিত। জানা মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব আমরা সেখানে ত্রাণ পৌঁছে দেব। রাখাইনে চলমান সহিংসতার প্রেক্ষাপটে প্রায় ৩০ হাজার অমুসলিম বাসিন্দাও গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

নিউইয়র্ক-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইটের ছবি পর্যালোচনা করে বলছে, মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চলে ২১৪টি গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যদিকে মিয়ানমান সরকার বলছে রোহিঙ্গা গ্রামবাসী ও আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসা’র জন্যই রাখাইনে ছয় হাজার আটশরো বেশি ঘরবাড়ি আগুনে পুড়ে গেছে। অং সান সু চি'র মুখপাত্র বলেন- ‘সন্ত্রাসীরা ঘরবাড়িগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে’।