এক সেনাবাহিনী কেড়ে নিয়েছে মুখের হাসি, আরেক সেনাবাহিনী...
- Details
- by জাতীয় ডেস্ক
দেশ ও জাতির কল্যাণে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা নিয়ে মিয়ানমারের সেনারাও পোশাক গায়ে জড়ায়। প্রত্যেক দেশের সেনাবাহিনীর মতো ওরাও সকল মানুষ এবং দেশমাতাকে রক্ষার শপথ নেয়। সেনাবাহিনী সবসময় নির্ভরতার প্রতীক কিন্তু রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে এই সত্যটা বদলে গেছে অনেক আগেই। রাখাইনে সেনা অভিযানের নামে সেনাসদস্যরা মুসলমানবিরোধী মিশনে হয়ে উঠেছে হিংস্র এবং বর্বর। রোহিঙ্গাদের চোখে সেনাবাহিনীর অপর নাম রক্তচোষা প্রাণী।
রাখাইনে ইতিহাসের সবচাইতে নির্মম অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। রোহিঙ্গা পুরুষ পেয়েছে, গুলি করে মেরেছে, নারী পেয়েছে ধর্ষণ করেছে, শিশু পেয়েছে আছড়ে মেরেছে। প্রাচীন যুগের অসভ্য সমাজও এতোটা নৃশংসতা কল্পনা করতে পারেনি যা বাস্তবে করে দেখিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। আর তাদের এই ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা।
নিজ দেশের সেনাবাহিনীর বন্দুকের নলকে লক্ষচ্যুত করে ভিনদেশে এসে তারা পড়েছে আবারও সেনাবাহিনীরই হাতে। এইরকমের পোশাক পরিহিত মানুষ তাদের জন্য স্বভাবতই এখন আতঙ্কের কারণ। কিন্তু না, এ যেন মুদ্রার ঠিক উল্টো পিঠ। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মমতায় রোহিঙ্গারা যেন মানবজন্মের সমস্ত দুঃখ, বেদনা, জরাজীর্ণতা ভুলে যেতে চায়।
রোহিঙ্গারা বলছেন, 'সেনাবাহিনী বলে কথা, প্রথমে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের ভালোবাসায়, যত্নে আমরা মুগ্ধ। তারা পরম যত্নে আমাদের খাদ্য-চিকিৎসা-আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন।'
আফেয়া খাতুন নামের এক রোহিঙ্গা বলেন, 'বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর এমন মানবিক আচরণ কখনোই ভোলার মতো নয়। তাদের কারণেই আমরা আজ নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছি।’
স্বামী হারা আফেয়া বলেন, 'পাঁচ মাসের শিশুসন্তানকে কোলে নিয়ে সাতদিন আগে এক কাপড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি। প্রথম কয়েকদিন খোলা আকাশের নিচে থাকার পর অপর এক রোহিঙ্গার পলিথিনের ছাউনিতে আশ্রয় পেয়েছি। ত্রাণের খাবার এসেছে কিন্তু আমি জোগাড় করতে পারিনি। এতো ভিড়ে ধস্তাধস্তি করে ত্রাণ সংগ্রহ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের সেনাবাহিনী আসার পর নিয়মিত খাবার পাচ্ছি। শিশুরাও খাবার ও কাপড় পেয়েছে।’
কক্সবাজারের উখিয়ায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন ও ত্রাণ বিতরণে শনিবার দুপুর থেকে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সরকার উখিয়ায় যে দুই হাজার একর জমি নির্ধারণ করে দিয়েছে সেখানে ১৪ হাজার শেড তৈরি করা হবে। এসব শেডের প্রতিটিতে ছয়জন করে ৮৪ হাজার পরিবার বসবাসের সুবিধা পাবে। এর পাশাপাশি সেনাবাহিনী ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমও পরিচালনা করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পজুড়ে সেনা সদস্যরা অনবরত কাজ করে যাচ্ছেন। তারা ত্রাণের টোকেন লিখে দিচ্ছেন, নিবন্ধন কার্যক্রম চালাচ্ছেন, ত্রাণের লাইন ঠিক করছেন।
সেনাদের ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মুহাম্মদ রাশেদ আকতার বলেন, 'সেনা সদস্যরা প্রথমে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ করে। বিচ্ছিন্ন ত্রাণ বিতরণ, অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন এবং রোহিঙ্গাদের অহেতুক জটলা সরিয়ে দিয়ে নির্বিঘ্ন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের আওতায় আসা রোহিঙ্গারাই শুধুমাত্র ত্রাণের আওতায় আসছে। তাই বায়োমেট্রিক করার সুবিধা সম্পর্কে রোহিঙ্গাদের জানানো হচ্ছে যাতে নিবন্ধন প্রক্রিয়াটা দ্রুততার সঙ্গে শেষ হয়।'
সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচার থেকে পালিয়ে এসে আবারও সেনাদের তত্ত্বাবধানেই থাকতে হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। তবে সব সেনারাই যে প্রাণঘাতি, অত্যাচারী নয় সেটা ভালোমতোই বুঝে গেছেন তারা। নিজ দেশের সেনা সদস্যদের রাইফেল হাতে তেড়ে আসতে দেখেছেন, ধর্ষকের রুপে দেখেছেন, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিতে দেখেছেন। আর বাংলাদেশের কক্সবাজারের ক্যাম্পে দায়িত্ব পালন করা সেনাদের তারা দেখছেন ত্রাণের প্যাকেট হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বাংলাদেশি সেনারা তাদের জন্য অস্থায়ী আবাসস্থল নির্মাণ করে দিচ্ছেন, চোখের পানি মুছে দিয়ে মুখে তুলে দিচ্ছেন খাবার। উর্দি পরা সেনাদের এমন রূপে সত্যি তারা বিমোহিত।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.