প্লাস্টিক খেকো ছত্রাকের সন্ধান, অপার সম্ভাবনার হাতছানি...

বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিষয়ক সচেতনতা বাড়ছে। তবে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের সবচাইতে বেশি ভোগায় প্লাস্টিকের বিভিন্ন সামগ্রী। কেননা প্লাস্টিককে পুড়িয়ে ফেলা ছাড়া ধ্বংস করার অন্য কোন উপায় নেই। তবে সম্ভাবনার খবর হলো, পাকিস্তানের আবর্জনার স্তুপে এমন এক ধরণের ছত্রাক পাওয়া গেছে যা খেয়ে ফেলতে পারে প্লাস্টিক।

২০১৫ সালের দিকে একটি শূককীট পাওয়া গেছিল যা প্লাস্টিক খেয়ে ফেলতে পারে। পরের বছর পাওয়া যায় ক্ষয় ধরিয়ে দিতে সক্ষম ব্যাকটেরিয়ার। আর এবার পাকিস্তানে খোঁজ পাওয়া এমন এক ছত্রাকের যা ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে পারে প্লাস্টিকের অণুগুলিকে। এটি মূলত প্লাস্টিকের বেঁধে রাখার 'হাত'গুলিকে ছড়িয়ে দেয়। ফলে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয় প্লাস্টিকের অণুগুলি। পরবর্তীতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মিশে যায় মাটিতে। এটি ১০ লক্ষ বছর ধরে মাটিতে অক্ষত থাকা প্লাস্টিককেও ধ্বংস করে দিতে পারে।

প্লাস্টিককে ধ্বংস করতে পারা এমন ছত্রাক সন্ধান পাওয়ার দাবি করেছেন চীনের অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা। পাকিস্তানি গবেষকদের সহযোগিতায় ইসলামাবাদের আবর্জনার স্তূপ থেকে প্লাস্টিক খেকো ছত্রাকটির সন্ধান পান বিজ্ঞানীরা। পরে এই ছত্রাক বিষয়ক তাদের গবেষণাপত্রটি পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল এনভায়রনমেন্টাল পলিউশানের জুন সংখ্যায় প্রকাশ পায়। যার শিরোনাম ছিল 'বায়োডিগ্রেডেশন অফ পলিয়েস্টার পলিইউরিথেন বাই অ্যাসপারগিলাস টুবিনজেনসিস'।

প্লাস্টিক খেকো ছত্রাকটির নাম 'অ্যাসপারগিলাস টুবিনজেনসিস'। ছত্রাকটি মূলত মাটিতে জন্ম নেয়। তবে গবেষণাগারে ছত্রাকটি প্লাস্টিকের ওপরেও জন্মেছিল। ছত্রাকটি থেকে বেরিয়ে আসা এনজাইম বা উৎসেচক (যা আদতে প্রোটিন) প্লাস্টিকের অণুগুলিকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে। যার গতিও বেশ ভালো। ফলে কয়েক সপ্তাহেই প্লাস্টিক পুরোপুরি ক্ষয়ে মাটিতে মিশে যায়।

ছত্রাকটির গবেষণা দেখা গেছে, 'প্লাস্টিক খেকো ছত্রাকটির বিভিন্ন মাধ্যমে আচার-আচরণে ভিন্নতা রয়েছে। ছত্রাকটি কতো দক্ষতার সঙ্গে প্লাস্টিকের অণুকে ভাঙতে পারবে, সেটা নির্ভর করে মূলত কোন মাধ্যমে আর কোন তাপমাত্রায় তাকে রাখা হচ্ছে।'

গবেষকরা ২ শতাংশ গ্লুকোজ মিশিয়ে ছত্রাকটির কার্যকারিতা তিনটি মাধ্যমে পরীক্ষাগারে রেখে কাজ করেছিলেন। প্রথমটি কালচার করা এসডিএ প্লেট, দ্বিতীয়টি তরল মাধ্যম। আর শেষেরটি হলো মাটিতে ছত্রাক পুঁতে। এরমধ্যে ছত্রাকটি কালচার করা মাধ্যমে সবচাইতে বেশি প্লাস্টিক ধ্বংস করতে পারে। এরপর তরলে আর সবচাইতে দুর্বল হলো মাটিতে।

এদিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, ২০১৪ সালে বিশ্বে প্লাস্টিক উৎপাদন হয় ৩১ কোটি ১০ লক্ষ টন। ২০৫০ সালে সেটি গিয়ে দাঁড়াবে ১ হাজার কোটি ১২ লক্ষ ৪০ হাজার টন। বর্তমানে সমুদ্রের তলায় প্লাস্টিকের চাইতে মাছের সংখ্যা দেড় গুণ হলেও ২০৫০ সালে মাছ-প্লাস্টিকের সেই অনুপাত হবে ১.১-এর নীচে। ফলে প্লাস্টিক খেকো এই ছত্রাককে ঘিরে সম্ভাবনার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা।