বাংলাদেশিদের নির্মমতার কাছে হেরে গেল এক রোহিঙ্গা

নিজ দেশে ঘরবাড়িতে জ্বলছে আগুন, চোখের সামনে মা-বোনদের করা হয়েছে ধর্ষণ, নির্মমভাবে খুন করা হয়েছে পুরুষ সদস্যদের। এমনই অমানবিক, নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলমানরা। প্রাণ বাঁচাতে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। এই মানবিক বাংলাদেশে এসে চুরির অপবাদে নির্দয় প্রহারে প্রাণ হারালো এক রোহিঙ্গা। বিষয়টি নজরে এসেছে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সানের।

ব্রিটিশ দৈনিক দ্য সান বলছে, এক রোহিঙ্গা পুরুষকে শিশু চুরির অভিযোগ এনে কক্সবাজারে মাটিতে ফেলে নির্মমভাবে কিল-ঘুষি, লাথি ও গাছে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছে উত্তেজিত জনতা। হামলাকারীরা প্রায় ২০ জন। হামলাকারীদের অধিকাংশই তরুণ। রোহিঙ্গা ওই ব্যক্তিকে প্রহার শেষে গাছের সঙ্গে বাঁধা হয়। তিনি প্রাণভিক্ষা চাইলেও মন গলেনি উত্তেজিত জনতার।

মিয়ানমার থেকে কোনমতে পালিয়ে আসা লাখো শরণার্থী অবস্থান কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয় ক্যাম্পে। সেখানেই শিশু চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে প্রাণ যায় হতভাগ্য এই রোহিঙ্গার। রোহিঙ্গা গণপিটুনির নির্মম দৃশ্যগুলো ধারণ করেছেন মূলত বার্তাসংস্থা এপির এক আলোকচিত্রী।

ছবিগুলোতে দেখা যায়, ওই রোহিঙ্গা ব্যক্তিকে চারদিক থেকে উত্তেজিত জনতারা আক্রমণ করছে। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্মমভাবে প্রহার করা হচ্ছে। শরীরে বল থাকা পর্যন্ত তিনি নিজেকে বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেন। গণপিটুনিতে এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মাটিতে লুটিয়ে পড়া অবস্থাতেও চলতে থাকে নির্যাতন।

এক পর্যায়ে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে বেদম মারপিট করা হয়। একপর্যায়ে করজোরে প্রাণও ভিক্ষা চান ওই রোহিঙ্গা। শেষ ছবিতে দেখা যায়, বাংলােদশি একদল মানুষের নির্মমতার কাছে হার মেনে মারা যান এই রোহিঙ্গা।

চলতি বছরের ২৫ আগস্ট বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির পুলিশের ৩০টি তল্লাশি চৌকি ও সীমান্তরক্ষীদের সেনাক্যাম্পে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। মিয়ানমার বলছে, হামলার সঙ্গে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা জড়িত। এরপর দেশটির সেনাবাহিনী অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে নিধনযজ্ঞ চালায়। এরপরই দলে দলে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিতে থাকে মানবিক বাংলাদেশে।