সঙ্কট অবসানে জরুরি হস্তক্ষেপ চান ১২ নোবেল জয়ী
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানবিক সঙ্কট অবসানে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ১২ নোবেল লরিয়েট ও বিশ্বের বিশিষ্ট নাগরিকরা। নোবেল বিজয়ীরা মনে করেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট আরও গভীরতর হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন তারা।
গুরুত্বপূর্ণ এই চিঠিতে রাখাইনের নিরীহ নাগরিকদের ওপর অবিলম্বের অত্যাচার বন্ধ এবং রাখাইনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপের জন্য সাতটি সুপারিশও করেন নোবেল বিজয়ীরা। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি ও সদস্যদের কাছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। বুধবার রাজধানীর ইউনূস সেন্টার থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
ঐতিহাসিক এই চিঠিতে ১২ নোবেল জয়ী ও বিশ্বের বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট পর্যালোচনা করতে নিরাপত্তা পরিষদের সভা আহ্বানের জন্য প্রথমে সংস্থাটিতে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আমরা মনে করিয়ে দিচ্ছি মিয়ানমারের রাখাইন অমানবিক ট্র্যাজেডি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আপনাদের হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। নিরাপত্তা পরিষদের দৃঢ় সংকল্প ও সাহসী সিদ্ধান্ত মানব ইতিহাসের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করবে।’
চিঠিতে বলা হয়েছে, রাখাইনে অভিযানের নামে দেশটির সেনাবাহিনীর নির্যাতনে শত শত রোহিঙ্গা জনগণ নিহত হয়েছেন। লাখ লাখ মানুষকে ঘরবাড়ি হারা করা হয়েছে। বহু গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। অত্যন্ত আতঙ্কের কথা হলো বিশ্বের বিভিন্ন মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে এসব এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। মানবিক সঙ্কট ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। জীবন বাঁচাতে গত দুই সপ্তাহে তিন লাখেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, গত বছরের শেষ দিকে আমরা কয়েকজন নোবেল লরিয়েট ও বিশ্বের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ রাখাইনের অমানবিক পরিস্থির জন্য আপনাদের জরুরি হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু আপনাদের হস্তক্ষেপেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। পরিস্থিতি আবারো চরম অবনতির দিকে, রাখাইনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় আপনাদের কাছে আবারো অনুরোধ করছি।
বলা হয়, আমরা চাই নিরীহ বেসামরিক মানুষদের ওপর সামরিক আক্রমণ চিরতরে বন্ধ হোক। তাদের আবাসন এবং নাগরিকত্ব দেয়া হোক। মিয়ানমার সরকার যে কারণে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করছে বিষয়টি একেবারেই আজগুবি। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার পর দেশটি রোহিঙ্গাসহ সকল জাতিগোষ্ঠীকে পূর্ণ নাগরিক বলে স্বীকার করে নিয়েছিল। রোহিঙ্গারা সংসদেও প্রতিনিধিত্বও করেছিল। এরপর ১৯৮০ সালে তাদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নিয়ে শুরু হয় পরিকল্পিত জাতিগত ও ধর্মীয় নিধন।
আরো বলা হয়, মিয়ানমার সরকারকে জানানো উচিত, তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থায়ন রোহিঙ্গাদের ওপর সরকারের নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল।
চিঠিতে অপপ্রচার, ঘৃণা ও সহিংসার উস্কানি বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পরিচালিত সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে আনান কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস (নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৬), মেইরিড মাগুইর (নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৭৬), বেটি উইলিয়ামস (নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৭৬), আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু (নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৮৪), অসকার আরিয়াস সানচেজ (নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৮৭), জোডি উইলিয়ামস (নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৯৭), শিরিন এবাদী (নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৩), লেইমাহ বোয়ি (নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১১), তাওয়াক্কল কারমান (নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১১), মালালা ইউসাফজাই, (নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১৪), স্যার রিচার্ড জে. রবার্টস, (চিকিৎসা শাস্ত্র ১৯৯৩), এলিজাবেথ ব্যাকবার্ন (চিকিৎসা শাস্ত্র ২০০৯) সাইয়েদ হামিদ আলবার (মালয়েশিয়ার প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী), এমা বোনিনো (ইতালির প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী), স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন (ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী), গ্রো হারলেম ব্রান্ড্টল্যান্ড (নরওয়ের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী), মো ইব্রাহীম (উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী), কেরি কেনেডি (মানবাধিকার কর্মী), আলা মুরাবিত (লিবীয় নারী অধিকার প্রবক্তা), নারায়ণ মুর্তি (ব্যবসায়ী নেতা), কাসিত পিরোমিয়া (থাইল্যান্ডের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী), সুরিন পিটসুয়ান (আসিয়ানের প্রাক্তন মহাসচিব), পল পোলম্যান (ব্যবসায়ী নেতা ও এসডিজি সমর্থক), ম্যারি রবিনসন (আয়ারল্যান্ডের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট), জেফরে ডি. সাচ (পরিচালক, জাতিসংঘ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশান্স নেটওয়ার্ক)।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.