ঢাবির উপাচার্য হিসেবে কতটা যোগ্য আখতারুজ্জামান?

গত ০৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই অধ্যাপক ড. আখরুজ্জামানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

সিনেট তিনজন শিক্ষককে পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করলেও তা স্থগিত করেছে আদালত। অন্যদিকে গত ২৩ আগস্ট উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি আখতারুজ্জামানকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। কিন্তু উপাচার্য হিসেবে কতটা যোগ্য আখতারুজ্জান?

ড. মো. আখতারুজ্জামান ১৯৬৪ সালের ১ জুলাই বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কালিপুর গ্রাম জন্মগ্রহণ করেন। এসএসসি পাশ করেছেন বরগুনার কালমেঘা মুসলিম হাই স্কুল থেকে। বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর ভর্তি হন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে ১ম স্থান অর্জন করে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্প্নন করার পর ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে তিনি পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমায় পড়েন। একজন কৃর্তি শিক্ষার্থী হিসেবে ভারতের আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯৯০ সালে তিনি ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করার পর ২০০৪ সালে তিনি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বিভিন্ন একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ও ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ইসলামের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে ২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত কলা ‍অনুষদের ডিন ছিলেন আখতারুজ্জামান।

বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে শিক্ষক রাজনীতিতেও পিছিয়ে ছিলেন না তিনি। বিএনপির শাসনামলেও তিনি আওয়ামীগ সমর্থীত শিক্ষকদের প্যানেল ‘নীল দলের’ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। সে সময় ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা তিন বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ ও ২০১১ সালে আরো দুই মেয়াদে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন আখতারুজ্জামান। বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কবি জসীম উদ্দীন হলের প্রাধ্যক্ষ হিসেবেও কাজ করেছেন এই গুণী অধ্যাপক।

এখানেই শেষ নয়। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলব্রাইট স্কলার ও যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং স্কলার হিসেবেও কাজ করেছেন। ‘মুসলিম ইতিহাসতত্ত্ব’ এবং ‘মধ্যযুগীয় বাংলার সমাজ ও নগরায়ণ’ নামে দুটি বইও রয়েছে। সম্পাদনা করেছেন আরো তিনটি বই। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ৪২টি গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে তাঁর।

সর্বশেষ উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। শত বছরের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে যোগ্য এবং প্রশাসনিকভাবে দীর্ঘদিনের এক অভিজ্ঞ অভিবাবককেই পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।