বৈষম্যের শিকার হওয়া বাংলাদেশি এক শিশুর লেখা

ক্লাস এইটে পড়া মেয়েটির নাম সুমাইয়া মাহী। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঞ্চলের ক্যামব্রিজ স্কুলে পড়ে সে। সম্প্রতি স্কুলের একটি নির্ধারিত পরীক্ষায় সে একটি রচনা লিখেছে। যার যা খুশি তা নিয়ে লিখতে বলা হয়েছিলো। এই সুযোগে মাহী লিখেছে দারুণ একটি বিষয় নিয়ে। ছোট্ট শিশু হলেও নিজের পরিচয় নিয়ে গর্বিত মাহী বলেছে, ‘আমি মুসলিম এবং বাংলাদেশি। এর মানে এটা নয় যে, আমি সন্ত্রাসবাদের সাথে সম্পৃক্ত।’

মাহী সন্ত্রাসবাদের কথা তুলেছে, কারণ বোস্টন ম্যারথনে বোমা হামলার ঘটনায় মুসলিম কেউ জড়িত ছিলো এবং বাংলাদেশি একটা ছেলে নিউইয়র্কে বোমা হামলার পরিকল্পনার দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলো। ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম হলে তো বটেই বাংলাদেশি হলেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে তাদের সম্পৃক্ত বলে ধারণা করা হয়। মাহী তার লেখা রচনায় এই ধারণাকেই উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

মুসলিম এবং বাংলাদেশি বলেই যে ভুল বিবেচনার শিকার হতে হচ্ছে, এ বিষয়টিকে মেনে নিতে পারছে না সুমাইয়া। তার লিখায় সে বলেছে, ‘আমি একজন মুসলিম। এই পরিচয় আমি কোনোভাবেই গোপন করবো না, তা মানুষ মুসলিম বলতে যাই বুঝুক না কেনো। উন্মত্ত কিছু মানুষ তাদের ধর্মকে বড় লজ্জার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তবে এর মানে এটা নয় যে, যারা এই বাজে কাজ করেছে তারাই ধর্ম।’

সে লিখেছে, ‘মুসলিমদের প্রতি বিশ্ব যে ধারণা পোষণ তার দায় অনেকটাই যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর উপর। প্রচার করা হচ্ছে যে, মুসলিমরা একটা দেশে সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু আসলে তা নয়। যারা বাজে কাজ করে দেশে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানো দায় কেবল সেই ব্যক্তিদের, যারা তা করে।’

সুমাইয়া তার লিখেছে একদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেছে, ‘এক রাতে আমি, আমার বোন এবং আমার এক বন্ধু মসজিদ থেকে ফিরছিলাম। আমাদের মাথায় হিজাব পড়া ছিলো। আমরা যখন আমাদের বাসার গ্যারেজের কাছাকাছি চলে আসি, তখন তারা আমাদের দিকে তাকিয়ে নিচু স্বরে কিছু বলছিলো। তখন আমি খুব শান্তভাবে তাদেরকে বলি কিছু বলার থাকলে ভালো করে বলতে। জবাবে তারা বলে, ‘মুসলিমরা ভয়ঙ্কর।’ এটা বলেই তারা হাসতে থাকে। এই ঘটনার আকস্মিকতায় আমি প্রথমে চুপ হয়ে যাই। পরে রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে আমি তাদের দিকে তাকিয়ে চিৎকার তাদেরকে ধমকে উঠি। যা হোক, তাদেরকে তখন যা বলেছিলাম তার জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু তারা তারই যোগ্য ছিলো। কারণ তারা অন্যদের কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের দায়ী করছিলো। অকারণে তারা আমাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে।’

সুমাইয়া লিখেছে, ‘আমি মুসলিম এবং বাংলাদেশি। আমার পরিচয়ের দুইটা সূত্র। এর মানে এটা নয় যে, আমি সন্ত্রাসী বা আমি এমন কেউ যে সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। একজন যদি ভুল করে, তবে তার জন্য তার ধর্মের বহু মানুষকে দায়ী করা যায় না। অনুমানের উপর নির্ভর করা কারো উচিত নয়। একই সাথে কারো কথায় কান দিয়ে কিছু বিশ্বাস করা উচিত নয়। সব কিছুতেই নিজে দেখে ও জেনে বিশ্বাস করা উচিত।’

বৈষম্যের শিকার হয়ে সুমাইয়া মাহী যা লিখেছে, তা প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অনলাইন মাধ্যম।

আপনি আরো পড়তে পারেন

সেলফি ভয়ংকর

মায়েদের অভিনব প্রতিবাদ

আমেরিকায় ৯.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের গুজব