বউয়ের যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদে পুরুষ: পাঠকের প্রতিক্রিয়া
- Details
- by পর্যালোচনা
গত ২১শে আগস্ট জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারে ‘বউয়ের যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদে পুরুষ, দেখার কেউ নেই!’ শিরোনামে পুরুষ নির্যাতনের নানাদিক এবং পুরুষ নির্যাতন আইন বাস্তবায়নের দাবি নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদটি প্রকাশের পরপরই সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। আমাদের ফেসবুক পেজ থেকে সংবাদটি পৌঁছেছে প্রায় সাড়ে বারো লক্ষ পাঠকের কাছে, সংবাদটি পড়েছেন প্রায় সত্তর হাজার পাঠক, শেয়ার হয়েছে ছয় হাজার বার, আর মতামত, লাইক দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ৭৫ হাজারেরও বেশি পাঠক।
প্রকাশিত সংবাদটিতে বলা হয়, পুরুষ শাসিত এই সমাজে সব সময়ই আলোচনায় আসে নারী নির্যাতনের খবর। তবে সংসারে কি শুধুই নারীরা স্বামীদের দ্বারা নির্যাতিত হন? পুরুষরা কি নারীদের দ্বারা নির্যাতিত হন না? পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন নামের একটি সংগঠন বলছে, সমাজে অনেক পুরুষই বউয়ের যন্ত্রণায় নিরবে কাঁদেন। লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে চোখ মোছেন...।
পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি শেখ খায়রুল আলমের বরাত দিয়ে বলা হয়, আমরা নারী নির্যাতনের কথা বলি, আন্দোলন করি। পুরুষ নির্যাতনের কথা বলি না। অনেক পুরুষ বউয়ের যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদেন, পুরুষদের বিষয়টি দেখার কেউ নেই। বিষয়টি হয়তো হাস্যরসের সৃষ্টি করছে। কিন্তু বিষয়টি প্রচারে না আসলেও সত্য। অনেক পুরুষ চক্ষুলজ্জায় বিষয়টি গোপন রাখেন। নারীদের সামান্য কিছু বললেই যৌতুক ও নারী নিযার্তনের মামলা দেয়। পুরুষরা নির্যাতিত হয়েও কিছু বলতে পারেন না। তবে পুরুষরা শুধু বাড়িতেই নয়, ঘরের বাইরেও নানাভাবে নিযার্তনের শিকার। পুরুষেরা তাদের আত্মসম্মানের জন্যই লুকিয়ে কাঁদেন। দিনের পর দিন বালিশ ভেজান।
এমন সংবাদ প্রকাশের পরই পাঠক প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। শতকরা ৯০ ভাগের বেশি পাঠক পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি শেখ খায়রুল আলমের কথার সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন। ডা: জুয়েল চক্রবর্তী নামের এক পাঠক টোয়েন্টিফোরলাইভ নিউজপেপারের সংবাদে নিজের নির্যাতিত হওয়ার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কমেন্ট করেছেন। তিনি লিখেছেন, 'চরম ভুক্তভোগী। আজ ৪ বছর ধরে নির্যাতিত হয়ে ১ বছর ধরে আলাদা আছি। কিন্তু কোন সুরাহা পাচ্ছি না। যেখানে যাই বিচারের জন্য সেখানেই একটা ভয় কাজ করে। এই মনে হয় ফাঁসিয়ে দিল নারী নির্যাতন মামলায়। সবকিছু থেকেও কেমন জানি মনে হয় আমি নিঃস্ব। কারো কাছে বলতে পারি না। কারণ, সবাই রহস্য করে, মজা নেয়। এ কোন যন্ত্রণায় আছি? এর কি কোন সমাধান নেই???'
আসাদুজ্জামান বদরুল নামের এক পাঠক লিখেছেন, পুরুষরা বউদের কারণে বাবা-মায়ের সেবা করতে পারে না। যদি কারও মা-বাবা অবহেলার শিকার হয় তার মধ্যে শতকরা ১০০ জন বউদের কারণে অবহেলার শিকার হয় বলে আমার মনে হয়। যদি কোন পুরুষ মা-বাবার সেবা করতে চায় তা হলে অনেক বউ রয়েছেন যারা সংসার ছেড়ে চলে যান এবং নির্যাতনের মামলাসহ অন্যান্য হয়রানি মামলা করে থাকেন। সমাজে নারী ও পুরুষ দুই জায়গাতেই নির্যাতনের মাধ্যম নারীরা। দেশে বৃদ্ধ মা-বাবা অত্যাচারিত হচ্ছে বলে যে পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর আসছে সেগুলো খোঁজ নিলে দেখা যাবে, পুরুষদের ইচ্ছা থাকলেও তারা মা-বাবার সেবা করতে পারছে না বউদের কারণে।
সুমাইয়া জান্নাত নামের এক নারী পাঠক অবশ্য এই অভিযোগের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ‘মিথ্যা প্রলাপ কম করুন।’ তবে পুরুষদের মতো এক নারী পাঠকও বলেছেন তিনিও পুরুষ নির্যাতন আইন চান। সোনিয়া কবির নামের ওই পাঠক লিখেছেন, ‘আমি একজন নারী হয়েও পুরুষ নির্যাতন আইন চাই। বাংলাদেশে এখন এই আইনের অনেক বেশি দরকার।’
ইসমাঈল রিয়াদ নামের এক পাঠক মন্তব্য করেছেন, ‘সাবাস বেটারা এতদিনে বুঝতে পারছ। তবে আরেকটা দাবি আছে আমার, সেটা হল কোন মেয়ে যদি স্বেচ্ছায় তালাক নেয় তাহলে সে কাবিনের টাকা পাবে না। যদি তার স্বামী তালাক দেয় তাহলে তাকে তালাকের টাকা দেওয়া দরকার। এ আইনটা ও পাস করা দরকার। এখন তো কাবিনের টাকা একটা ব্যবসা হয়ে গেছে।’
পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি শেখ খায়রুল আলমের বিরোধিতা করে জাকিয়া সুলতানা নামের এক নারী পাঠক লিখেছেন, ‘নারীরাও দিন দিন অত্যাচারিত হচ্ছে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের হাতে, স্বামীর হাতে। কই সে কথা তো কেউ বলেন না। এখনো অনেক নারী আছে যারা স্বামীর অত্যাচারে শেষ হয়ে গেছে। স্বামী অন্য নারীকে ঘরে নিয়ে আসে। কোন নারী এর প্রতিবাদ করলেই হয়ে যায় নারী দ্বারা পুরুষ অত্যাচার। নারীরাও পুরুষের দ্বারা ঘরে বাইরে অত্যাচারিত অবহেলিত। নারীদের দোষ দেখার পাশাপাশি নিজেদের দিকটাও দেখেন।’
দাউদ হোসেন নামের এক পাঠক পুরুষের নানা রোগ বালাইয়ের জন্য বউয়ের নির্যাতনকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘পুরুষের হার্ট এ্যাটাক, অকাল বার্ধক্য, অকাল ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, কিডনি রোগ, ঘুষখোর হওয়া, নিজের বাড়ির লোকদের পর করে দেওয়ার অন্যতম কারণ অস্থির স্বভাবের নারী। পুরুষের গড় আয়ু কম হয় এইসব নারীর অবিরাম অত্যাচারের কারণে।
নাসিম তালুকদার অবশ্য এসব মানতে নারাজ। পুরুষের নির্যাতিত হওয়ার পেছনে তিনি পুরুষদেরকেই দোষ দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মানতে পারলাম না। নিজের দোষ স্ত্রীর ঘাড়ে চাপাবেন না। পুরুষরা যদি তাদের দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন হন, তাহলে সেখানে স্ত্রীরা কখনই বাধা হতে পারেন না। সে যত বড় দজ্জালই হোক না কেন। ছেলেরা বাবা মার প্রতি দায়িত্ববান হলে সে নিজেই তার ক্ষেত্রটুকু তৈরি করে নিবে। অথচ তা না করে বউয়ের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেরাই দূরে সরে থাকে। একজন সত্যিকারের পুরুষই পারে একাধারে স্ত্রীকে এবং বাবা-মাকে তাদের স্ব স্ব অবস্থান ও প্রাপ্তিটুকু বুঝিয়ে দিতে। নিজের ব্যর্থতার দায়ভার সারাজীবন স্ত্রীর কাঁধে দেয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন।’
প্রবাসী ইউসুফ লিখেছেন, ‘এই দাবিটা আরো অনেক আগেই হওয়া উচিৎ ছিল। যাক দেরিতে হলেও শেষ পর্যন্ত দাবি উত্থাপন করেছেন তাই ধন্যবাদ। আমি মনে করি নারীর চাইতে পুরুষও কম নির্যাতিত হয় না। বরং এখন অনেকাংশে বেশি হয়। পুরুষরা যে নিরবে নির্যাতন সয়ে যাচ্ছে, তার দিকে কারো খেয়াল নেই। একটু খোঁজ নিলে দেখা যায়, হাজার হাজার পুরুষের সংসার তছনছ করে দিয়েছে নারী, অথচ নির্যাতনের কোন খবরই নাই। নারীর মন যখন যেমন চায় তেমন করে, কতো পুরুষের সব সম্পদ নিয়ে তাকে ফকির করে অন্য জায়গায় চলে যায়। পরে আবার নারী নির্যাতনের ভয় দেখায়। আমি আশাবাদী তাড়াতাড়ি পুরুষ নির্যাতনের আইন পাশ হবে।’
এদিকে নারী নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে দোলনা দাস গুপ্তা লিখেছেন, ‘শতকরা ৯৭ ভাগ পুরুষেরা নারী নির্যাতন করেন। শিক্ষিত নারীরা নীরবে কাঁদেন। মান সম্মানের ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারেন না। বাহুশক্তি প্রয়োগ করে নারীদের ওপর নির্যাতন চালায় পুরুষরা। তারা যা বলে নারীদের তাই মুখ বুজে সহ্য করতে হয়।’
প্রশান্ত মণ্ডল নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘নারী নির্যাতন আইনের ফাঁক গলিয়ে প্রতিনিয়ত কত পুরুষের স্বপ্নভঙ্গ হয় তা ভুক্তভোগীরাই জানে। স্ত্রীরা স্বামী ও তার আপনজনদের সঙ্গে ব্ল্যাকমেইলিং করে ওই আইনের বলে। ওই আইনে মিথ্যা বলে মামলা করলেও তার সঠিকতা যাচাই না করেই বিচারক স্বামীকে আসামি বানিয়ে জেলে প্রেরণ করেন যা অমানবিক। যেহেতু পরিবারের ভালোমন্দ ও তাদের দেখভাল করাসহ স্ত্রীর ভরণপোষন পুরুষকেই করতে হয় সেহেতু পুরুষ তার স্ত্রীর অসদাচরণ মানবেনই বা কেন? নারীদের কারণেই সংসারে যত বিপত্তি শুরু হয়। প্রতিটি পুরুষই চায় সে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা মা ভাইদের নিয়ে সকলে একত্রে হাসি-খুশি জীবনযাপন করবে। কিন্তু নারীরূপী ডাইনি চরিত্রের কারণে পুরুষের সে স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে হয়। প্রতিনিয়ত এসব নারীদের কারনেই বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বাড়ছে, সুতরাং পুরুষদের পক্ষেও আইন হওয়া আবশ্যক। নারীদের কারণে কোন সংসার ভাঙলে সেই সব নারীদেরও শাস্তির বিধানে আনা আবশ্যক। আমি একজন শিক্ষক হিসাবে দাবি করছি, পুরুষ নির্যাতন আইন হওয়া আবশ্যক।
কৃষ্ণা রায় লিখেছেন, ‘১০০% ঠিক। আমি মনে করি মেয়েরা মনে হয় ভুলে গেছে যে তারাও ১দিন শ্বাশুড়ি হবে। বর্তমান সময়ে নারীদের যে অধিকার রয়েছে তাতে পুরুষেরা নির্যাতিত হচ্ছে। যেমন ইভটিজিং। এক্ষেত্রে নারীদের দোষ ধরা হয় না। কে কী করলো সেটা কেউ দেখবে না। নারী যেটা বলবে প্রশাসন সেটাই সঠিক মনে করে। ফলে পুরুষ হয় নিঃস্ব।’
মোহাম্মদ সাইফুল নামের এক পাঠক লিখেছেন, ‘বউয়ের যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদে পুরুষ! দেখার কেউ নাই, বলার মানুষ নাই। বাংলার প্রতিটি ঘরে আজ এই অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ আজ থেকে ২০ বছর আগেও এমন ছিল না। এর প্রধান কারণ আকাশ সংস্কৃতি। বিশেষ করে স্টার জলসা আর জি বাংলা এই চ্যানেল দুটি'ই বাংলার নারীদের নষ্টের মূল কারণ। নারীর অধিকারের কথা বলে নারীর চরিত্র থেকে মমতা, ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধ, মনুষত্ববোধ আজ হারিয়ে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে পারিবারিক বন্ধন। সংসারের সুখ বলতে পুরুষের চোখের জলে ভেসে চলা একটি ভেলা।’
অধিকাংশ পাঠকই স্বীকার করেছেন, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের নারীদের দ্বারা পুরুষরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন। নারীরা ‘নারী নির্যাতন আইনের’ ভয় দেখিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা করছেন সেটা অনেকে তুলে ধরেছেন। এসব বিবেচনা করে অনেক পাঠক নারী নির্যাতন আইনের পাশাপাশি পুরুষ নির্যাতন আইন পাশ করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.