অধিক জনসংখ্যা বাংলাদেশের আশীর্বাদ, চীনের বিকল্প হওয়ার হাতছানি

বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। পদ্মা সেতুর মত বড় প্রকল্পের কাজ বাংলাদেশ এখন নিজস্ব অর্থায়নেই করতে সক্ষম। বাংলাদেশের এই অভাবনীয় সাফল্য এশিয়া অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া যে কোন দেশের জন্য অনুসরণীয় হতে পারে। আগামীতে এশিয়ার মধ্যে উৎপাদনভিত্তিক অর্থনীতিতে পৃথিবীর অন্যতম পরাশক্তি চীনের বিকল্প হতে পারে বাংলাদেশ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস’ সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে এমনই একটি আশাব্যঞ্জক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এশিয়ায় চীনের বিকল্প হতে পারে বাংলাদেশ। একই সাথে এশিয়া অঞ্চলে বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছে ভিয়েতনাম। উভয় দেশের কাছাকাছি সাফল্য দেখিয়েছে কম্বোডিয়া। এ দেশগুলোর অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধরণ বলছে, আগামীতে এশিয়ায় চীনের বিকল্প উৎপাদন অঞ্চল হতে পারে এসব দেশ।

এক সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে ‘জনসংখ্যা বিস্ফোরণ’ বা বোঝা হিসেবে মনে করলেও ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস তাদের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বিশাল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশ এখন ‘জনসংখ্যা বোনাস’ ভোগ করছে। এই বোনাসকে কাজে লাগিয়ে এবং সস্তা শ্রমের বদৌলতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে নিজেকে পরিচয় করিয়েছে। তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর কারণে দেশটির লাখ লাখ নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। যা দেশটির নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গ্রামের পরিবারগুলো এখন ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার বিনিয়োগ করতে পারছে। দেশটি বর্তমানে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। যা বিশ্বের নজর কেড়েছে।

তবে এ অর্থনৈতিক উন্নয়ন কতটা টেকসই সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ড্যানি রডরিক বলেছেন, দরিদ্র অনেক দেশে শিল্পায়নের অভিজ্ঞতা খুব ভালো নয়। ১৯৮০-এর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনৈতিক উন্নতি দেখে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার কিছু দেশে অনেক শিল্প গড়ে ওঠেছিল। কিন্তু এদের অনেকেই আশানুরূপ সাফল্য পায়নি।

তবে সাফল্যের গল্পও আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে ধংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে এশিয়ায় জাপান অর্থনৈতিক বিজয় পতাকা উড়িয়েছে। সাফল্য দেখিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের মত দেশ। তবে বাংলাদেশের মতো শ্রমঘন দেশের জন্য বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জ হলো স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি। এর ফলে মানুষের কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে জাতিসংঘের একটি গবেষণা তথ্য ব্যবহার করে বলা হয়েছে, বেশির ভাগ শিল্প উৎপাদন এখনো চীনকেন্দ্রিক। এর কারণ হচ্ছে পণ্য উৎপাদনে চীনের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বেশি। উৎপাদনে চীনের প্রতি এই অতিনির্ভরশীলতা ভাঙতে পারে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের মতো দেশের উপস্থিতি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভারসাম্য ধরে রাখছে। কারণ বাংলাদেশ যদি কম দামে পণ্য বিক্রি করে, তবে চীন ইচ্ছা করলেও বেশি দামে পণ্য বিক্রি করতে পারবে না।

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-তাদের প্রতিবেদনে এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলছে, চীনে শ্রমিক খরচ বেড়ে গেছে। ফলে তাদের কারখানাগুলো এখন স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থার প্রতি জোর দিচ্ছে। স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় আগামী আরও কয়েক দশক পর্যন্ত শ্রমিকনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার চাহিদা থাকবে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে এখনো শ্রমবাজার বেশ সস্তা। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারে দেশটি। তাছাড়া বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের মতো দেশে বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এসব দেশের কারণে ভোগ্যপণ্যের নতুন বাজার তৈরি হচ্ছে। এসব দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ায় লাখো মানুষ দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাচ্ছে। যা বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।