বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে যেভাবে অপদস্থ করলো ছাত্রলীগ

গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে ক্লাস নেয়ার অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত) মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে বাধ্যতামূলক এক মাসের ছুটি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শোক দিবসে ক্লাস নেয়ার যে ঘটনায় মাহবুবুল হক ভূঁইয়াকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে সেই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যায়, পরিকল্পিতভাবে আগে থেকেই মোবাইলের ভিডিও অপশন চালু করে ক্লাস নিতে থাকা ওই শিক্ষককে অপদস্থ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা।

মাহবুবুল হক ভূঁইয়া যখন ক্লাস নিচ্ছিলেন তখন ছাত্রলীগের নেতারা কোনোরকম অনুমতি না নিয়েই ক্লাসরুমে ঢুকে পড়েন এবং শোক দিবসে ক্লাস নেয়ায় শিক্ষককে চার্জ করেন। এতে ক্লাসরুমে উপস্থিত শিক্ষক ও ছাত্ররা জানায়, পরদিন তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হওয়ায় শিক্ষক তাদের পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন, এটা কোনো শিডিউল ক্লাস নয়।

কিন্তু এতে ছাত্রলীগের নেতারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা শিক্ষককে গালমন্দ করার পাশাপাশি ক্লাসের সকল ছাত্রছাত্রীকে ‘শিবির’ বলে অপবাদ দিতে থাকেন। এছাড়া এক ছাত্রলীগ নেতা শিক্ষককে ‘আপনার চেতনা নাই’ বলে ধমক দেন।

ক্লাসের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের গালমন্দ করার এক পর্যায়ে এক ছাত্রলীগ নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী সাব্যস্ত করে বলেন, 'এ দিনেই তো বঙ্গবন্ধু সপরিবারে সবাইকে হত্যা করছে’। এছাড়া অন্য একজন নেতা উপস্থিত সাংবাদিকদের ‘সাংবাদিকবিন্দু’ বলে সম্বোধন করছিলেন।

ভিডিওটিতে ছাত্রলীগ নেতাদের ব্যবহার ও অশুদ্ধ ভাষার প্রয়োগ এবং কোনো প্রমাণ ছাড়াই ক্লাসের শিক্ষার্থীদের 'শিবির' বলে আখ্যা দেয়ায় ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সবাই এই ছাত্রলীগ কর্মীদের বহিষ্কারের দাবি জানান।

এদিকে মাহবুবুল হককে বাধ্যতামূলক ছুটির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মোসলেহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে ১৫ আগস্টের পর থেকে ওই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করে আসছে ছাত্রলীগ। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকতা বিভাগের ওই শিক্ষককে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তের পর ছাত্রলীগ প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তাদের দেয়া তালা খুলে দেয়। তবে শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন শাস্তির ঘটনায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের শিক্ষকরা বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। এছাড়া শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে রোববার।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, গত ১৫ আগস্ট গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে তাদের কিছু বিষয় বোঝাচ্ছিলেন মাহবুবুল হক ভূঁইয়া। সেই সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা শ্রেণিকক্ষে গিয়ে বাধা দেয় এবং শিক্ষককে লাঞ্চিত করে বিষয়টি ভিডিও করে রাখে। ওই দিনই শোক দিবসের দিনে ক্লাস নেয়ার অভিযোগে শিক্ষককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দেয় ছাত্রলীগ।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘আমার ও শিক্ষার্থীদের বক্তব্য না নিয়েই আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোন ধরণের তদন্ত ছাড়াই ব্যবস্থা নেয়াটা অন্যায্য ও অন্যায়। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লেখালেখির কারণে প্রশাসনের কেউ কেউ ক্ষুব্ধ। ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকেই এই ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ এ বিষয়ে বলেন, ‘সব বিষয় বিবেচনা করে মাহবুবুলকে এক মাসের ছুটি দেওয়া হয়েছে। আগামী ২০ আগস্ট থেকে পরের মাসের ১৯ তারিখ পর্যন্ত ছুটি বলবৎ থাকবে। এই বিষয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের পর পরবর্তী পদক্ষেপ জানানো হবে।

সেই ভিডিও: