সারা দেশে শোক দিবস পালিত: শ্রদ্ধা-ভালবাসায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ

যথাযোগ্য ভাব-গাম্ভীর্য ও মর্যাদায় সাথে জাতি স্মরণ করেছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই সেই নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। স্বপরিবারে নিঃশেষ করে দেয়ার ঘৃণ্য চেষ্টা চালানোর ৪২ বছর পরও বাঙালি তার বন্ধুকে স্মরণ করেছে বিনম্র চিত্তে। এদেশের কোটি মানুষ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে ছুটে গেছে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে। সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে কিংবা শহীদ মিনারে জানানো হয়েছে শ্রদ্ধা।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবন ও বর্তমান বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাবার ও পরিবারের সদস্যদের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটিতে কিছুক্ষণ সময় কাটান।

প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানো শেষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা। এরপর সেখানে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, তাঁতীলীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৮টায় বনানী কবরস্থানে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ও সেই রাতের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুসহ বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, তাঁতীলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও সর্বস্তরের জনগণ ১৫ আগস্টে নিহতদের কবরস্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর পরই সর্বস্তরের মানুষের জন্য কবরস্থানের গেট উন্ম‍ুক্ত করে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ বেদিতে পুষ্পস্তাবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। প্রধানমন্ত্রী তার ছোটবোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর কবরে সূরা ফাতেহা পাঠ করেন এবং ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাতে অংশ নেন।

এ সময় শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশারাফ হোসেন, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, সাবেক চিপ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, মুহাম্মদ ফারুক খান, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জি. মোশারাফ হোসেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, বাহাউদ্দিন নাসিমসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 

মঙ্গলবার সূর্য উদয়ের পর বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনসহ সারা দেশের সব ধরনের সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। মূলত ১৪ আগস্ট বিকেল থেকেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে মাইকে, সাউন্ড বক্সে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও দেশাত্ববোধক গান প্রচার করা হয়। বিভিন্ন জায়গায় প্যান্ডেল নির্মাণ করে নেতাকর্মীরা আলোচনা সভা ও কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করে। রাতভর গরু জবাই ও রান্না-বান্নার কাজ দেখভাল এবং শোক দিবসের নানা আয়োজনের শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি নিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

শোক দিবস উপলক্ষে সারা দেশের প্রতিটি জেলায় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কালো ব্যাচ ধারণ, শোক র‌্যালী, আলোচনা সভা, দোয়া অনুষ্ঠান, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও গরীবদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দিবসটি পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

দেশের প্রতিটি জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় গুরুত্বের সাথে ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের খবর, দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে দেশের প্রথম সারির সব কয়টি দৈনিক। প্রতিটি অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশন চ্যানেলে ছিল বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে নিয়ে বিশেষ অয়োজন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছিল শোকের দুঃখগাথা। দেশের অধিকাংশ ফেসবুক ব্যবহারকারী বঙ্গবন্ধুর ছবিসহ পোস্ট দিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য লিখে দিবসটি স্মরণ করেছেন।

তবে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সেখানে শোক দিবসের আয়োজন কম লক্ষ্য করা গেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বল্পপরিসরে বন্যার্তদের সাহায্য করা ও কাঙ্গালী ভোজ বিতরণের মধ্য দিয়ে বন্যা কবলিত অঞ্চলে শোক দিবস পালন করেছে দলের ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।