মুজিব হত্যার বিচার: ফিরে দেখা দুঃসময়
- Details
- by এম.এস.আই খান
বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ও বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী পালিত হচ্ছে সারাদেশে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বাংলার পূবের আকাশে সূর্য ওঠার পূর্বেই সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্য ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। আজ থেকে ৪২ বছর আগে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর রাতে ঘটা ইতিহাসের সেই কলঙ্কজনক ঘটনার বিচার পেতে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল বাঙালি জাতিকে। ৩৫ বছর আগের সেই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ও বিচার নিয়ে থাকছে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার-এর বিশেষ আয়োজন...
৩২ নম্বরের ওই বাড়িটির দেয়ালে দেয়ালে ছিল বুলেটের চিহ্ন, জানালার কাঁচ ছিল চূর্ণ-বিচূর্ণ, সিঁড়িতে ছিল জমাট বাধা ঘন রক্ত গড়িয়ে যাওয়ার চিহ্ন, ফ্লোরে ও ছাদে ছিল ছোপ ছোপ রক্তের দাগ, ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছিল ঘরের জিনিসপত্র। প্রথমতলার সিঁড়ির মাঝখানে নিথর পড়ে ছিল চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত স্বাধীনতার মহানায়কের নিষ্প্রাণ দেহ। বুলেটে ঝাঁঝরা বুকের পাশেই পড়ে ছিল মোটা ফ্রেমের কালো চশমাটি। দানবের বুটের নিচে সেদিন বঙ্গবন্ধুর চশমা আর প্রিয় তামাকের পাইপটি যেন হয়েছিল পিষ্ট।
সেদিন স্বপরিবারে প্রাণ হারিয়েছিলেন জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠসন্তান বঙ্গদেশের বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও সেদিন পাষণ্ড সেনাকর্মকর্তাদের নিষ্ঠুর বুলেটে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের ওই বাড়িতে নিথর হয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, ছোট ছেলে শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত ও বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিল।
সেই কালো রাতে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ওই বাসায় না থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। সে সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার স্বামী প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে জার্মানিতে অবস্থান করায় তারা ঘাতকের বুলেটের শিকার হননি। শেখ রেহানাও তাদের সাথে জার্মানিতে থাকায় ওই হত্যাকাণ্ড থেকে বেঁচে যান।
পরিবারের সব সদস্যদের হারানোর পর বেঁচে থাকাটাই যেখানে চ্যালেঞ্জ সেখানে বঙ্গবন্ধু কন্য শেখ হাসিনা শক্ত হয়েছেন। অন্যদিকে ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার থেকে দূরে রেখে বাঁচিয়ে দেয়া হয়। হাতের মুঠোয় প্রাণ নিয়ে সেনাবাহিনী শাসকের ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েই শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে নিস্তেজ ও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দলকে (আওয়ামী লীগ) পুনর্গঠন করেন। মরতে মরতে বেঁচে যেয়ে ১৯৯৬ সালে পিতার মৃত্যুর দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে পিতার খুনিদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে কাজ শুরু করেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমণ্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি হত্যামামলা দায়ের করলে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বা দায়মুক্তি আইন বাতিল করে দেয়।
এরপর মোট চার ধাপে চলে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার কার্য। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর প্রথম আদালত ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। নিম্ন আদালতে ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল শুনানিতে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ বিভক্ত রায় দেয়। বিচারপতি এম রুহুল আমিন মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত ১৫ আসামির মধ্যে পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়ে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। আর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ আসামির সবার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন।
এরপর ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চ তৃতীয় বারের মত রায় দিয়ে ১৫ জনের মধ্যে তিন জনকে খালাস দিয়ে, ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোট ক্ষমতায় এলে মুজিব হত্যার বিচার কাজ আবার আড়ালে চলে যায়। আর ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা করে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
এসব ঘটনার ছয় বছর পর ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে তিন বিচারপতির বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির আপিল শুনানি গ্রহণ করতে শুরু করলে আবারো আলোচনায় আসে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচারকার্য আরো গতি পায়। এর প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালে ১৯ নভেম্বর ১২ জনকে মৃত্যদণ্ড দিয়ে চতুর্থবারের মত চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ। রায়ে বজলুল হুদা, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহারিয়ার রশিদ খান ও ল্যান্সার মহিউদ্দিন আহমেদ, পলাতক খন্দকার আবদুর রশিদ, পলাতক রিসালদার মোসলেমউদ্দিন, পলাতক শরিফুল হক ডালিম, পলাতক এ এম রাশেদ চৌধুরী, পলাতক নূর চৌধুরী, (পলাতক) ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ও আবদুল আজিজ পাশাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এদের মধ্যে আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে ২০০২ সালে মারা গেছেন। ২০১০ সালের ২৬ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত এই ১২ আসামীর মধ্যে প্রথম পাঁচ জনকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে কলঙ্ক মোচন করে বাঙালি জাতি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.