সরকারি অর্থে হজে যাচ্ছেন কারা?

হজে যেয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং পাপ কর্মের জন্য অনুশোচনা করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সরকারি খরচে হজে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। পাপ মোচন করতে যাওয়ার পথেই পাপ করে হজে গেলে সে হজ কবুল হবে কিনা এমন প্রশ্ন এখন মুখে মুখে।

এ বছর হজ নিয়ে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্যে সরকার ১০ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে যারা ভিসা জটিলতার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন, তাদের দুর্ভোগ কমাতে তেমন কোন সফল উদ্যেগ নেয়নি সরকার। অথচ ‘ধার্মিক মুসলিম’ বিবেচনায় এ বছর ৩১৮ জন সরকারি খরচে হজে যাচ্ছেন। এই তালিকায় স্থান পেয়েছে আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান সরকারী কর্মকর্তা ও আইন প্রণেতারা।

জানা গেছে, বিনামূল্যে হজ করার ক্ষেত্রে ময়মনসিংহ, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও ফরিদপুর এই চার জেলার লোকজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে হজে নেয়ার ক্ষেত্রে যুক্তি দেয়া হয়েছে যে, তালিকায় স্থান পাওয়া এই এলাকার ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের হজ করার মত আর্থিক সংঙ্গতি নেই।

দেশের প্রথম সারির একটি ইংরেজি দৈনিক এ সংক্রান্ত তাদের একটি প্রতিবেদনে দাবি করছে, এ বছর বিনামূল্যে হজের জন্য নির্বাচিত হজযাত্রীদের বেশির ভাগই আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান। হজ করার মত সামর্থ্য নেই- এমন ব্যক্তিদের চেয়ে সমর্থবান ব্যক্তিদের বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। অপ্রত্যাশিতভাবে ‘সৌভাগ্যবান’ এই তীর্থযাত্রীদের দলে ময়মনসিংহ-৪ (সদর)-আসনের ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এবং ক্ষমতাসীন দলের অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজন, কর্মচারী ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা রয়েছেন।

জানা গেছে, এ বছর রাষ্ট্রীয় খরচে হজে যাওয়া ৩১৮ জনের মধ্যে ৮১ জনই ময়মনসিংহ জেলার। মন্ত্রীর ছেলে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহিত উর রহমান শান্ত এবং তার পিএস আবু সাঈদ তাদের অনুগত ব্যক্তিদের এই তালিকায় রেখেছেন। ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট ইউসুফ খান পাঠান আর্থিকভাবে সচ্চল হওয়ার পরেও এই তালিকায় তার নাম রয়েছে। রহস্যজনকভাবে তালিকায় স্থান পাওয়া অনেক ব্যক্তির বাবা-মা এবং পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা উঠানো হয়নি।

জানা গেছে প্রতিবছরই মন্ত্রী তার অনুগত ও কাছের ব্যক্তিদের বিনামূল্যে হজে পাঠান। আর প্রতিবছরই হজে যাওয়ার তালিকা দীর্ঘ করেন। রাষ্ট্রীয় খরচে ২০১৪ সালে ১২৪ জনকে, ২০১৫ সালে ২৬৩ জনকে (যার মধ্যে মন্ত্রীর এলাকার ৪৭ জনকে রাখা হয়েছিল) এবং ২০১৬ সালে ২৮৩ জনকে হজে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবছরই এই হজযাত্রীদের মধ্যে বড় অংশ স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে মনোনিত করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

চলতি বছর হজ যাত্রীদের মেডিকেল সেবার জন্য সৌদিকে অবস্থানরত বাংলাদেশি মেডিকেল টিমকে সাহায্য করার জন্য মন্ত্রণালয় ১৭১ জনের একটি দল সেখানে পাঠিয়েছে। যাদের ১৬৩ জনেরই এ বিষয়ে কোন ধরনের ধারণা নেই। এক্ষেত্রেও ব্যক্তিগত পছন্দসই ব্যক্তিদের পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য পেশাদারদের সমন্বয়ে একটি যথাযথ প্রতিনিধি পাঠানোর পরিবর্তে কেন তাদেরকে পাঠানো হয়েছে এবং হজ যাত্রী নির্বাচনের ‘মানদণ্ড’ কী ছিল? এমন প্রশ্নে উত্তরে ধর্ম মন্ত্রণালয় বলছে, ‘সেখানে বন্দুকধারী এবং ব্যক্তিগত সহকারীদের আমাদের হাজিদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার চাইতেও বেশি প্রয়োজন পড়ে।’

পত্রিকাটি তাদের বিশ্লেষণে বলছে, এ ধরনের ঘটনা ‘স্বজনপ্রীতি’ ব্যতিত ভিন্ন কিছুিই নয়। সরকারের পক্ষ থেকে এই ধরনের পদক্ষেপগুলি জনসাধারণের অর্থের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে এবং জনগণের দুঃখকষ্টের কারণ এ ধরনের ঘটনা। যদি করদাতার অর্থ 'বিনামূল্যে হজের' জন্য বরাদ্দ করা হয়, তবে মন্ত্রণালয়ের ভাগাভাগি মনোভাব বাদ দিয়ে সমাতার ভিত্তিতে হাজি নির্ধারণ করা কি উচিত নয়? -এমন প্রশ্নও রাখা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

নাগরিক প্রতিক্রিয়া বলছে, ‘এভাবে গরিবের হক নষ্ট করে স্বচ্ছলদের হজে যাওয়াটা কতটুকু ধর্মীয় ইবাদত? আর ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এমন পক্ষপাত পূর্ণ আচরণ অর্ধম চর্চা করা নয় কি?