যেখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সমান

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যেন লেগেই আছে। বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগের অস্বীকার, কিংবা পাল্টা অভিযোগের খবর প্রতিদিনই গণমাধ্যমে আসে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোড ম্যাপ নিয়েও দুই দলের মধ্যে চলছে নানা বিতর্ক। শত অমিলের ভিড়ে দুই দলের মধ্যে কোন মিলই যেন খুঁজে পাওয়া যায় না। কোন ঘটনায় আওয়ামী লীগ এক ধরনের মত দিলে বিএনপি তাতে আপত্তি জানায়। আবার বিএনপির কোন মত বা সমর্থনের বিরোধীতা করে আওয়ামী লীগ।  

এমন দা-কুমড়া সম্পর্কের মাঝেও দুই দলের কিছু মিল আছে। যেমন- সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত  গ্রিক দেবী থেমিসের অবয়ব নিয়ে যখন সারা দেশে নানা আলোচনা-সমালোচনা তখন আ.লীগ-বিএনপি উভয়েই তা অপসারণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। ২৬ মে রাতে হঠাৎ করেই সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে থেমিসের ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর চাপের মুখে পড়ে। সরকারের সমালোচনা করেন অনেকেই। 

সরকারের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিলো, সুপ্রিম কোর্টের সামনে ভাস্কর্যটি সরকারের সিদ্ধান্তে বা নির্দেশে সরানো হয়নি। আদালেত নির্দেশেই তা সরানো হয়েছে। সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দলের পক্ষ থেকেও বলা হয় ভাস্কর্য অপসারণে সরকারের কোন সাফল্য নেই। আদালতের ইচ্ছায় তা সরানো হয়েছে। ইসলাম প্রিয় জনগোষ্ঠীর আপত্তির মুখে ভাস্কর্যটি অপসারণ করার মধ্য দিয়ে তখন রাজনৈতিক দল দুটির মধ্যে ভোট ব্যাংক খেলা করছিল বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

বিএনপি তখন সরকারের এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছিল। সে সময় অনেক রাজনৈতিক বিশ্লষকরা এর কারণ হিসেবে বলছিলেন, ‘বিএনপি মুসলিম জনগোষ্ঠীর দাবির প্রতি সমর্থন দিয়ে তাদের ভোট ব্যাংক দলের পক্ষে টানার চেষ্টা করছিল।’ তাই ভাস্কর্য অপসারণে সরকারের কোন ক্রেডিট নেই বলে দলটির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছিল।

অন্যদিকে সাংগঠনিকভাবেও দুই দলের মধ্যে একটি বিষয়ে বেশ মিল লক্ষ্য করেছে নির্বাচন কমিশন। দল দুটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া এক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে উভয় দলে নারী প্রতিনিধির সংখ্যা সমান। দলে কত শতাংশ পদে নারীরা আছেন তা জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে দেয়া দুই দলের পৃথক প্রতিবেদন মিলিয়ে দেখা যায়, উভয় দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সব কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা সমান।

দেশের ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল তাদের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী নির্ধারিত ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব পূরণ করার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে গত ১৩ জুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

চিঠির উত্তরে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দাবি করছে, তাদের সব পর্যায়ের কমিটিতে ১৫ শতাংশ পদে নারীরা রয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন নারী প্রতিনিধিত্বের সংখ্যা ১৫ শতাংশের বেশি রয়েছে। দলটির দাবি তাদের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৯ শতাংশ পদে নারীরা আছেন। আর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)-এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১১ দশমিক ৯৯ এবং অন্যান্য কমিটিতে ৮ থেকে ১০ শতাংশ নারী সদস্য আছেন।

১৩ জুন নির্বাচন কমিশন চিঠি পাঠিয়ে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা বললেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ২০টিরও কম দল তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে। ফলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বাকি দলগুলোকে তলব করে ফের চিঠি দেয়া হয়। এ বিষয়ে ইসির সহকারী সচিব রৌশন আরা বলেন, ‘এখনও পর্যন্ত ৩৫টি দল প্রতিবেদন জমা দিলেও পাঁচটি দল প্রতিবেদন দেয়নি।’

প্রতিবেদন জমা না দেয়া পাঁচ দল হল-বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন ও গণফোরাম। আর যারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তাদের অধিকংশই বর্তমান অবস্থা ‍তুলে না ধরে ২০২০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে জানিয়েছে।

সব মিলিয়ে, গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে মিল পাওয়া গেলেও পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দুই দলের কেউ-ই কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। জাতীয় ঐক্য বা নির্বাচনপূর্ব সংলাপ বা এ ধরনের কোনো উদ্যোগে সাফল্য পাওয়া তাই এখনো আগের মতোই কঠিন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।