এইচএসসির ফল: অসন্তোষ নিয়ে বোর্ডে রেকর্ড সংখ্যক চ্যালেঞ্জ

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় এ বছর মোট দেড় লাক্ষ শিক্ষার্থী বিভিন্ন বিষয়ে নম্বর পরিবর্তনের লক্ষ্যে তিন লাখ আবেদন করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আবেদন পড়েছে ইংরেজি বিষয়ে। অর্ধ লাখেরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী তাদের ইংরেজি বিষয়ে ফলাফল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই প্রথম রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী কোন একক বিষয়ে তাদের ফলাফল নিয়ে শিক্ষাবোর্ডকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।

বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৮টি শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে ফল নিরীক্ষার আবেদন জমা পড়েছে ৫৫ হাজার ১২৪টি। এবছর উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলেও ধস নেমেছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর পাস ও জিপিএ-৫ অনেক কমে গেছে। এ বছর পাসের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশে। পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী তিন লাখ বিষয়ে ফল নিরীক্ষার আবেদন জানিয়ে বোর্ডে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।

গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫ হাজার বেশি ফল নিরীক্ষার আবেদন জমা পড়েছে। আর বিষয়ের সংখ্যা বেড়েছে ৪৩ হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে মোট ১৪ হাজার ৯১৭ জন আবেদনকারী তাদের ফল পরিবর্তনের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। তারা ৪৮ হাজারের বেশি পত্রে ফল নিরীক্ষার আবেদন করেছেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১০ হাজার ২৪৩ জন আবেদনকারী ফল নিরীক্ষার আবেদন জানিয়েছেন। তারা ২১ হাজারের বেশি পত্রের ফল নিরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন।

সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আবেদন পড়েছে ঢাকা বোর্ডে। এই বোর্ডে ৪৭ হাজার ৭০০ জন শিক্ষার্থী মোট এক লাখ ৩৩ হাজার ২০০ খাতার ফল নিরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন করা হয়েছে ইংরেজি বিষয়ে। ইংরেজি দুই পত্রে আবেদন পড়েছে ১২ হাজার ৩২৫টি।

চট্টগ্রাম বোর্ডে উচ্চ মাধ্যমিকে ১৪ হাজার ৯৪৯ পরীক্ষার্থী ফল নিরীক্ষার আবেদন করেছেন। ১৩টি বিষয়ে ফল নিরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীরা আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ইংরেজি প্রথমপত্রে সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৪৮৮টি খাতা পুনরায় দেখার আবেদন এসেছে। ইংরেজি প্রথমপত্রে ছয় হাজার ৪৮৮ এবং দ্বিতীয়পত্রে পাঁচ হাজার ২১১টি আবেদন পড়েছে।

এবার সবচেয়ে খারাপ ফল করা কুমিল্লা বোর্ডে ১২ হাজার ৭০ জন শিক্ষার্থী মোট ৩৩ হাজার ৭৩৩টি বিষয়ের ফলাফল পুনরায় নিরীক্ষার আবেদন করেছেন। এই বোর্ডে ইংরেজিতে আবেদন পড়েছে ১২ হাজার ৯৭০টি।

সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ছয় হাজার ১২৬ জন আবেদনকারী ১৭ হাজার ৬৯৪টি পত্রের ফল নিরীক্ষার আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ইংরেজি প্রথমপত্রের দুই হাজার ৪৮৩, ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রে দুই হাজার ১৩০টি আবেদন জমা পড়েছে। 

বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ১২ হাজার ৩১৪ জন আবেদনকারী ৩৬ হাজার ৪১৩টি পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। ইংরেজি দুটি পত্রে মোট আবেদন পড়েছে ১১ হাজারের বেশি।

রাজশাহীতে ফল নিরীক্ষার জন্য ১২ হাজার ২৭০ জন শিক্ষার্থী মোট ৩১ হাজার ২৪৫টি পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। এই বোর্ডে ইংরেজিতে আবেদন পড়েছে ১২ হাজার ৩৪৪টি।

যশোর বোর্ডে ১১ হাজার ২৩১ জন শিক্ষার্থী মোট ২৩ হাজার ৪৬৬টি পত্রের নম্বর পুনরায় বিবেচনার জন্য আবেদন করেছেন। ইংরেজিতে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে। মোট তিন হাজার ৭৪৪টি আবেদন পড়েছে ইংরেজীতে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে ফল নিরীক্ষার জন্য ১০ হাজার ৪৬ জন শিক্ষার্থী মোট ২১ হাজার ২৬টি পত্রে আবেদন করেছেন। এই বোর্ডে ইংরেজিতে আবেদন পড়েছে দুই হাজার ৬৪৪টি।

জানা গেছে, ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলেই কোনো শিক্ষার্থীর খাতা পুনরায় মূল্যায়ন হয় না। পুনঃনিরীক্ষণের ক্ষেত্রে মোট ৪টি দিক দেখা হয়। এগুলো হলো- সব প্রশ্নের উত্তরপত্রে নাম্বার দেয়া হয়েছে কিনা, নাম্বার সঠিকভাবে গণনা করা হয়েছে কিনা, ওএমআর শিটে প্রাপ্ত নাম্বার উঠানো হয়েছে কিনা, ওএমআর শীটের নম্বর অনুযায়ী সঠিকভাবে বৃত্তভরাট করা হয়েছে কিনা। আগামী ২২ আগস্ট এই পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড।

এত বেশি সংখ্যক আবেদন করার বিষয়ে আন্তঃবোর্ড ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার বলেন, 'পূর্বে শুধুমাত্র জিপিএ দেখতে পেত। কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছে তা জানতে পারত না। ২০১৬ সাল থেকে শিক্ষার্থীরা জিপিএ দেখার পাশাপাশি পত্র এবং এমসিকিউর আলাদা আলাদা নম্বরও দেখতে পাচ্ছে। যারা পরবর্তী গ্রেডের কাছাকাছি নম্বর পেয়েছে তারা বেশি সংখ্যক আবেদন করেছে। কেউ যদি ৭৮ বা ৭৯ বা দুটি পত্র মিলিয়ে ১৫৮ পেয়েছে তারাই ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছে। তারা ধারণা করেছে হয়ত আবেদন করলে নম্বর পরিবর্তন হয়ে যাবে।'