১/১১’র কুশিলবরাই ঢাবি উপাচার্যকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে

১/১১’র কুশিলবরাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্যকে নিয়ে মিথ্যাচার প্রচার করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। অসত্য এবং আশিংক তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করছে। এ ধরনের অপসাংবাদিকতা বন্ধ করা উচিত।’

বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে এ সব কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনকে ‘অপসাংবাদিকতা’ আখ্যা দিয়ে ব্যানার ফেস্টুন হাতে মানববন্ধনে অংশ নেয় তারা। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ‍বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের ডাকা ওই মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই সদস্যসহ বেশ কিছু বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থীরাও অংশ নিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগ ও প্রশাসনের উপাচার্যপন্থী শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মানববন্ধনে উপস্থিত থেকে সংহতি প্রকাশ করেন।

মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রহমত উল্যাহ। তিনি বলেন, ‘সমাজ বিনির্মাণে সাংবাদিকরা কাজ করে। কিন্তু আজকে মিথ্যা প্রচার করে দেশের বিনির্মাণ বাধাগ্রস্থ করার চেষ্টা চলছে। মিথ্যার উপর ভিত্তি করে কোনো শক্তি বিজয়ী হয়নি। তাই ভিত্তিহীন সংবাদ কোনভাবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষক সমিতি মেনে নিবে না।’

মানববন্ধনে উপস্থাপক সামিয়া রহমান বলেন, ‘গণমাধ্যম কয়েকদিন ধরে ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সংবাদ প্রচার করছে। এদের ব্যাকগ্রাউন্ড যদি দেখেন, তবে দেখা যাবে দেশের ১/১১ সময়কালীনও তাদের ভূমিকা একই ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গত কয়েক বছরে একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। ঠিকমতো ক্লাস না নিলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নিয়ম চালু করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সুষ্ঠ পরিবেশ তারা অপপ্রচারের মাধ্যমে নষ্ট করতে চাচ্ছে।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক চেয়ারপারসন ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেশ ও জাতির পথপ্রদর্শক। কিন্তু গত কয়েকদিন আগে থেকে কয়েকটি গণমাধ্যম এই প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা অপপ্রচারের মাধ্যমে গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ না জেনে সিনেট অধিবেশন আহ্বান ও এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মধ্য দিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।’

আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল নীল দলের সাবেক আহ্বায়ক ও রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, ‘আরেফিন সিদ্দিক কোন ব্যক্তি নয়, তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে, অসম্মান করলে, পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র, অসম্মান করা হয়। আমরা তার তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান নষ্ট হতে দিবো না। যে কোনোভাবেই হোক এ অপচেষ্টা প্রতিহত করব।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘আজ বিশ্ববিদ্যালয় শান্তিপূর্ণভাবে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সেশনজট নেই। এখানে কোনো ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় না। এগুলোই কি উপাচার্যের দোষ? উপাচার্যকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম যে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে তার দ্বারা সাংবাদিকতা নিজে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে আক্রান্ত করছে।’

উপাচার্যকে নিয়ে যারা গণমাধ্যমে সমালোচনা করেন তাদের উদ্দেশ্যে মানবকণ্ঠের সম্পাদক আনিস আলমগীর বলেন, ‘কেউ ২৪ ঘণ্টা টেলিভিশন চালিয়ে যদি সেখানে চার ঘণ্টা নিজের চেহারাই দেখায়, তাহলে রাস্তার মানুষও সো কলড (তথাকথিত) সেলিব্রিটি হতে পারে। ঘরে ঘরে নাম পাওয়া মানেই সেলিব্রিটি না। গণমাধ্যমে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে তাই বলা উচিত নয়।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রুবাইয়াত ফেরদৌস বলেন, ‘উপাচার্য সম্পর্কে একপক্ষীয় যে বক্তব্য প্রকাশ করা হচ্ছে তা সত্যের অপলাপ। সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে সত্যের যে অপলাপ চলছে আমরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি।’

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন স্যার এ এফ রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ আফতাব উদ্দীন, মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ নিজামুল হক ভূঁইয়া, জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ অসীম সরকার, সহকারী প্রক্টর আফতাব আলী শেখ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ফরহাদ উদ্দিনসহ আরো অনেকে।