সালমান শাহ’র মৃত্যু রহস্য উন্মোচনকারী, কে এই রুবি?

সালমান শাহ’র মৃত্যুর পর বলা হয়েছিল, ‘সালমান আত্মহত্যা করেছেন’। থানায় মামলা হওয়ার পর দফায় দফায় তদন্ত করেও গত ২০ বছরে তার মৃত্যু রহস্যের কোন সমাধান মেলেনি। তবে নতুন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব নেয়ার পর রহস্য জট কিছুটা খুলতে শুরু করেছে।

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুকে আত্নহত্যা বলে দাবি করে তার স্ত্রী ও স্ত্রীর পরিবার জানিয়েছিল, ‘সলমান ড্রেসিং রুমের ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। দড়িটি ছিল ব্যায়ামের যন্ত্র থেকে বের করা। আর ফ্যান পর্যন্ত উঠতে তিনি ঘরে থাকা একটি কাঠের মই ব্যবহার করেছেন।’

ঘটনার বিবরণে বলা হয়েছিল, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে আবুল সামিরাকে জাগিয়ে বলেন, অনেকক্ষণ আগে ড্রেসিংরুমে ঢুকলেও সালমানের কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। সামিরা তখন দরজার ডুপ্লিকেট চাবি খুঁজতে থাকেন। রাত পৌনে ১২টায় ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে আবুল ও সামিরা ড্রেসিং রুমের দরজা খুলে দেখেন ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে আছেন সালমান। সামিরা ও দুই কাজের মেয়ে সালমানকে উঁচু করে ধরেন এবং পাশের বাসার কাজের মেয়ে দড়ি কেটে সালমানকে নামিয়ে আনেন।’

‘নামানোর পর পাশের বাসার কাজের মেয়েটি বলে, শরীর এখনো গরম। তখন তার মাথায় ও গায়ে তেল মালিশ করা হয়। এ সময় ‘মে ফেয়ার বিউটি পার্লার’ থেকে পারিবারিক পরিচিত রুবি আসেন এবং তিনিও অংশ নেন সালমানকে বাঁচাতে।’

সালমানকে বাঁচাতে আসা এই রুবিই তার হতাকাণ্ডের সাথে অভিযুক্ত। পুলিশ আত্মহত্যা হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে অপমৃত্যু’র মামলা করলে তাতে আপত্তি জানিয়ে সালমানের পরিবার যে ১১ জনকে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। তাদের মধ্যে ৭ নম্বর আসামি এই রুবি। ওই মামলার বাকি আসামিরা হলেন- সামিরা হক (সালমানের স্ত্রী), চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মাদ, লতিফা হক লুসি (সামিরার মা), রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, সহকারী নৃত্যপরিচালক নজরুল শেখ, ডেভিড, আশরাফুল হক ডন, মোস্তাক ওয়াইদ, আবুল হোসেন খান ও গৃহকর্মী মনোয়ারা বেগম।

রাবেয়া সুলতানা ওরফে রুবি থাকতেন সালমানের ফ্ল্যাটের (ইস্কাটন প্লাজার) উত্তর পাশের বিল্ডিংয়ে। রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রশিদের মেয়ে তিনি। তার স্বামী ছিলেন প্রয়াত ক্যাপ্টেন জামিল।

মেজর জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর যে ১৩ জন সেনা কর্মকর্তাকে ফাঁসি দেয়া হয় তার মধ্যে তার(রুবির) স্বামী ছিলেন অন্যতম। ক্যাপ্টেন জামিলের সংসারে জন্ম নেয় তার একমাত্র পুত্র ভিকি। ৩১ বছর আগে তিনি এক চাইনিজকে বিয়ে করেন। সালমানের মৃত্যুর পর তিনি আমেরিকায় পাড়ি জমান। সেখানেই চাইনিজ স্বামী-সন্তান নিয়ে বাস করছেন তিনি।

‘সাংবাদিক ও সালমান শাহ’র অজানা কথা’ বইতে সুপন রায় লিখেছেন- ‘সালমান-সামিরার দাম্পত্য কলহের পশ্চাতে রাবেয়া সুলতানা রুবির ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। সালমানকে তিনি দেখে নেবেন, এরকম কথাও বলেছেন। যাদুশিল্পী আজরা জ্যাবিনের কাছে এই রুবি বলেছিলেন, ‘সালমানের সব টাকা তার মা নিয়ে যাচ্ছে সামিরার কি হবে’?

এ অভিযোগের বিষয়ে সালমানের মা নীলা চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলের টাকা আমি নিলাম না তার বাবা নিল- এসব নিয়ে রুবির মাথা ব্যথা কেন? রুবি কে, যে আমার সংসার জীবনে হস্তক্ষেপ করবে?’

এই রুবি নানা সময় সালমানের মৃত্যু নিয়ে নানা ধরনের মন্তব্য করে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন বেশ কয়েকবার। ‘সালমান আত্মহত্যা করেছেন’ এই তথ্য প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নানা চেষ্টা করেছেন। তবে এবার তিনি চারদিকে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। নতুন এক ভিডিও বার্তায় তিনি স্বীকার করেছেন সালমানকে খুন করা হয়েছিল। সেই খুনের সঙ্গে জড়িত ছিল সালমানের স্ত্রী ও তার বাড়ির লোকজন। রুবির ছোট ভাই ও তার চাইনিজ স্বামীও খুনের সঙ্গে জড়িত। ভিডিও বার্তায় সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীকে রুবি অনুরোধ করেন, তিনি যেন সালমান খুনের মামলাটি পুনরায় তদন্তের ব্যবস্থা করেন। রুবি নিজে এই খুনের সাক্ষী দেবেন। যদিও রুবি এতদিন সব অস্বীকার করে এসেছেন।

ওই ভিডিও বার্তায় রুবি বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ খুন হইছে। আমার হাজব্যান্ড করাইছে এটা আমার ভাইরে দিয়ে, এটা সামিরার (সালমানের স্ত্রী) ফ্যামিলি করাইছে। আর সব ছিল চাইনিজ মানুষ। আমি রুবি এখানে ভাইগা আছি।’