ফের ভারতের রানের পাহাড়, শ্রীলঙ্কার হোঁচট

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি কলম্বো টেস্টের দ্বিতীয় দিনও হয়ে থাকলো ভারতের। প্রথম দিন শেষেই রান পাহাড়ের ইঙ্গিত দেয়া ভারত শেষ পর্যন্ত তাদের প্রথম ইনিংসে তুলেছে ৬২২ রান, নয় উইকেটে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এটি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান। এর আগে ২০১০ সালে একই ভেন্যুতে ৭০৭ রানের কীর্তি আছে ভারতের।

ভারতের এতো রানই শ্রীলঙ্কাকে চাপে ফেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। এর মধ্যে ব্যাটিংয়ে নামার পর তাদের চাপটা আরো বাড়িয়ে দিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। ব্যাটিংয়ে নেমেই দুই উইকেট খুইয়ে বসেছে তারা; আর দুটি উইকেটই নিয়েছেন এই স্পিনার। দ্বিতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কা দুই উইকেট হারিয়ে তুলতে পেরেছে ৫০ রান। অর্থাৎ দ্বিতীয় দিনেই তারা তারা পিছিয়ে পড়েছে ৫৭২ রানে।

কলম্বোতে ভারতের এমন দাপটের মূল কুশীলব ব্যাটসম্যানরা। আরো বিশেষ করে বললে— চেতেশ্বর পুজারা ও আজিঙ্কা রাহানে। এ দুজনের দারুণ জুটি এবং সেঞ্চুরির কল্যাণেই গলের দাপট নিয়ে কলম্বোতেও হাজির বিরাট কোহলির দল।

গলের প্রথম দিনে সেঞ্চুরি করেছিলেন শিখর ধাওয়ান ও চেতেশ্বর পুজারা। আর কলম্বোর প্রথম দিনে পুজারার সঙ্গী রাহানে। এই প্রথমবার, বিদেশের মাটিতে পরপর দুই টেস্টের প্রথম দিনেই দুজন করে ভারতীয় ব্যাটসম্যান পেয়েছেন তিন অংকের দেখা। ভারতীয় দলের বর্তমান ব্যাটিং লাইনটা যে তাদের স্বর্ণ সময়ের পথেই আছে; তা তো এই তথ্যেই ধারণা করা যায়।

ভারতীয় ব্যাটিং লাইনের প্রথম পাঁচজন যদি হন প্রতিপক্ষের জন্য ভয়ানক, তবে পরের ছয়জন ভয়ানকতর! প্রথম পাঁচজন যে বোলারদের শাসন করবেন, এ আর তেমন কী! কিন্তু পরের দিকের ব্যাটসম্যানরাও বোলারদের ঘুম হারাম করে দিবেন, তা কি আর ধারণার ব্যাপার?

ধারণার ব্যাপার যা নয়, অশ্বিন-ঋদ্ধিমান-জাদেজারা করে দেখিয়েছেন তা-ই। ছয় নম্বরে নেমে ৫৪ রান করেছেন অশ্বিন। তার ঠিক পরে নামা ঋদ্ধিমানের ব্যাট থেকে এসেছে ৬৭ রান। অশ্বিন-ঋদ্ধিমান আউট হওয়ার পর হয়তো লঙ্কান বোলাররা হাফ ছেড়ে বাঁচার অনুভূতি পাচ্ছিলেন। কিন্তু নয় নম্বরে নামা জাদেজা যে ছাড়িয়ে গেছেন এ দুজনকেও— তার ব্যাট থেকে এসেছে ৭০ রান!

কলম্বোতে আক্ষরিক অর্থেই বড় বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন লঙ্কান বোলাররা। নয় উইকেটে ৬২২ করে ফেলার পর ইনিংস ঘোষণা করে তাদের যেনো মুক্তিই দিয়েছেন কোহলি। কিন্তু সেই মুক্তি আর টিকলো কতক্ষণ! ব্যাটিংয়ে নামার পরই লঙ্কানদের মনে নতুন ভয় ঢুকিয়ে দিলেন অশ্বিন।

স্কোরকার্ডে কোনো রান উঠার আগেই বিদায় নেন উপুল থারাঙ্গা। অশ্বিনের আর্ম বলে বিভ্রান্ত হয়ে সিঙ্গেল নিতে ক্যাচ তুলে দেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। বল সরাসরি চলে যায় শর্ট লেগে দাঁড়ানো লোকেশ রাহুলের কাছে; পেট বরাবর আসা বলটা তালুবন্দি করতে মোটেও ভুল করেননি তিনি। লঙ্কানদের দ্বিতীয় উইকেটটা পড়ে দলীয় ৩৩ রানে। এবার করুনারত্নে পথহারা হন অশ্বিনের টার্নারে। আউটসাইড এজ হয়ে বল চলে যায় স্লিপে দাঁড়ানে আজিঙ্কা রাহানের হাতে। দ্বিতীয় দিন এরপর আরো ১৭ রান যোগ করেছে শ্রীলঙ্কা— কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই।

তবে ক্ষতি যাওয়ার তা বোধহয় হয়েই গেছে। ৫৭২ রানে পাহাড় সামনে নিয়ে তৃতীয় দিনে শ্রীলঙ্কা আর কতোই বা সামনে যেতে পারবে; কে জানে! ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু শক্তিতে পরিণত হওয়া শ্রীলঙ্কার জন্য এই টেস্ট সিরিজটা বোধহয় বিভীষিকা ছাড়া আর কিছু দিবে না।