‘চুল চোর’ নিয়ে আতঙ্কে নারীরা

মূল্যবান জিনিসপত্র এবং টাকা-পয়সা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই চুরি হয়ে যাওয়ার কথা হয়ত শুনেছেন। কিংবা নিজেও হয়ত চুরির শিকার হয়েছেন।  কিন্তু নিজের মাথার চুলও যে চুরি হয়ে যেতে পারে, তা ভেবেছেন কখনো? হ্যাঁ এমন আশঙ্কায় এখন সময় কাটাচ্ছেন ভারতের হরিয়ানা ও রাজস্থানের নারীরা।

দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ হরিয়ানা ও রাজস্থানে অনেক নারীই তাদের চুল হারিয়েছেন। অচেতন অবস্থায় তাদের চুল কেটে নিয়ে গেছে। এ নিয়ে তারা থানায় মামলাও করেছেন। পঞ্চাশেরও বেশি নারীর দেয়া এমন অভিযোগ নিয়ে তদন্তে নেমে পুলিশ এই রহস্যের কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না। ফলে ওই দুই রাজ্যের নারীদের এখন ঘুম হারাম।

এসব ঘটনার বিষয়ে ভারতীয় পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেন, চুল চুরি খুবই অদ্ভুত ঘটনা। আমরা তদন্ত চালাচ্ছি। তবে এখনো পর্যন্ত যত জায়গায় এ চুল চুরির ঘটনা  ঘটেছে তার কোন স্থানেই কোনো ধরনের আলামত পাওয়া যায়নি। এমনকি হামলার শিকারদের মেডিকেল রিপোর্ট করেও কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।

ব্যবসায়ী এবং কৃষক অধ্যুষিত এলাকায় থাকেন সুনিতা দেবী। গত শুক্রবার তিনি তার নিজ বাসায় থাকাকালে তার চুল চুরি হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন। সুনিতা দেবী অভিযোগ করে বলেন, ‌‌‘তীব্র আলোর ঝলকানিতে আমি অচেতন হয়ে পড়ি। ঘন্টাখানেক পর জেগে দেখি আমার মাথায়  চুল নেই। এই ঘটনায় আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমি না পারছি ঘুমাতে, না পারছি কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে। তিনি জানান, চুল কেটে নেওয়া যাওয়া চোরটি একজন বয়স্ক পুরুষ। চোরের পরনে ছিল উজ্জ্বল রংয়ের কাপড়।’

সুনিতা দেবীর এই ঘটনার পরদিন একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে তারই বাসার কয়েক গজ দূরে। রাতের আঁধারে চুল হারিয়েছেন গৃহকর্মী আশা দেবী। তিনি বলেন, ‘আমার চুল চুরি হওয়ার পর বেশ আতঙ্কে আছি। একজন নারী চোর আমার চুল কেটে নিয়ে গেছে। এই ঘটনার পরদিনই আমার ছেলের বউসহ বাড়ির সব নারীকে উত্তর প্রদেশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছি।’

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, চুল কেটে নিয়ে যাওয়া এই 'ভুতুরে নাপিত' প্রথম দেখা যায় গত জুলাই মাসে ভারতের রাজস্থানে। এরপর থেকে হরিয়ানা এমনকি রাজধানী দিল্লিতেও এই ধরনের ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনা নিয়ে নানাজন নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। কেউ বলছেন ডাইনি বা প্রেতাত্মারা চুল কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ বলছেন সংঘবদ্ধ চোর চক্র এ কাজ করছেন। আবার অনেকে বলছেন, কিছু নারী মিডিয়ায় আলোচিত হতে এ ধরনের ঘটনা সাজিয়েছেন।

তবে চুল চুরির শিকার হয়েছেন একাধিক নারী। প্রায় পঞ্চাশজন নারী এখন পর্যন্ত এ ধরনের ঘটনার ভুক্তভোগী হয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের বেশির ভাগেরই বয়স পঞ্চাশের  উপরে। ফলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে যে, এত বয়স্ক নারীরা এবং এত সংখ্যক নারীদের সবাই কি মিডিয়ার প্রচারণার জন্য চুল কেটেছেন?