সরে দাঁড়ালেন নওয়াজ, কে হচ্ছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী?

অনেক দিন ধরেই অর্থ পাচারের অভিযোগে তদন্ত ছিলো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে শুক্রবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। এই ঘোষণার পরপরই অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন তিনি। নওয়াজ পদত্যাগ করলেও তার দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ক্ষমতায় থাকছে। তবে কে হবেন পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী, তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। 

নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক উত্তরসূরী তার মেয়ে মারিয়াম নওয়াজ। কিন্তু তিনি নির্বাচিত সংসদ সদস্য নন। ফলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে দেখা যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও নেই। 

দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের নাম। এ ছাড়া উচ্চারিত হচ্ছে পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল, সংসদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিকের নামও। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলির নামও শোনা যাচ্ছে। কিন্তু দুদিন আগেই নিসার আলি জানিয়েছেন, তিনি আর রাজনীতিই করবেন না। সব মিলিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী পেতে বেশ বেগই পেতে হবে পাকিস্তানকে। 

এ দিকে এবার নিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় থাকার মেয়াদকাল পূর্ণ করার আগেই ক্ষমতা ছাড়তে হলো নওয়াজকে। এর আগে ১৯৯০ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ১৯৯৩ সালে দুর্নীতির দায়ে পদ ছাড়তে হয় তাকে। এরপর ১৯৯৭ সালে আবার প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মুখে পড়ে ক্ষমতা হারান নওয়াজ।

নওয়াজের এবারের দুর্ভাগ্য-পর্ব শুরু হয় গত বছর পানামাভিত্তিক সেবা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার কিছু গোপন নথি ফাঁসের মাধ্যমে। সেই সব নথিতে দাবি করা হয়, নওয়াজ শরিফ এবং তার পরিবার বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। এতে নওয়াজ ও তার তিন সন্তানকে অর্থ পাচারে সম্পৃক্ত বলে দাবি করা হয়।

নওয়াজ এবং তার পরিবার শুরু থেকেই তাদের উপর আনা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। পরে এ বছরের শুরুর দিকে আওয়ামী মুসলিম লিগের প্রধান শেখ রাশেদ ও জামায়াতে ইসলামীর আমির সিরাজুল হকের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতে শুনানি হয়।

সে সময় আদালত বলেন যে, নওয়াজকে ক্ষমতা থেকে সরাতে যথেষ্ট প্রমাণ নেই। এরপর আদালত একটি যৌথ তদন্ত দল গঠন করে দেন। সেই দলের দেয়া প্রতিবেদনের পরই মূলত পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজ শরিফকে অযোগ্য ঘোষণা করেন।

একই সঙ্গে আদালত বলেছেন, নওয়াজ ভবিষ্যতে কোনো দিন প্রধানমন্ত্রী পদে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। অর্থাৎ আজীবনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদ হারিয়েছেন নওয়াজ। তিনি সংসদ নির্বাচনেও কোনোদিন আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। নওয়াজের সঙ্গে তার জামাতা মুহাম্মদ সফদারকে জাতীয় পরিষদের সদস্য পদে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।

এ দিকে নওয়াজ শরিফের দলের নেতারা বলছেন যে, এখন সাংবিধানিক উপায় মেনে তারা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিবেন। দলটির মুখপাত্র বলেছেন যে, তারা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিবেন।