যদি ধূমপান ছাড়তে চান...

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, কার অজানা? প্রেমিকার শত্রু, মায়ের আফসোস দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছেন এই অপকর্মটি আর নয়। কিন্তু নিকোটিনের নেশা ছাড়ার উপায়টি কিছুতেই ভেবে পাচ্ছেন না? আপনার এই সু-সিদ্ধান্তে আর কেউ আপনার পাশে থাকুক আর না থাকুক আমরা আছি আপনার পাশে।

কেননা ধূমপান ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আপনার অবশ্যই জেনে রাখা উচিৎ কোন বিষয়গুলো আপনাকে আবারও ধুমপানের দিকে টেনে নিয়ে যেতে পারে। আমরা আপনাকে এমন কিছু টিপসই দিবো যা এই বদ অভ্যাসের লোভ এড়াতে আপনাকে সাহায্য করবে।

ধূমপান ছাড়ার প্রথম প্রতিজ্ঞাটি আপনার নিজেকেই করতে হবে। দৃঢ়ভাবে আপনার নিজেকে বার বার বলতে হবে আপনি এটি ছেড়ে দিতে চান। কোন বিষয়টি আপনাকে ধুমপানে আগ্রহী করে তুলে সেটি আপনিই সবচেয়ে ভাল জানেন তাই না? সেটি মনে মধ্যে গেঁথে নিন।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের যে সময়গুলোতে আপনার ধুমপানের ইচ্ছা হবে সে সময়ে অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করুন। আপনি কখনো ধূমপান করতেন এই ব্যাপারটাই ভুলে যেতে চেষ্টা করুন। ধরুন, কাজের বিরতিতে আপনার ধুমপানের অভ্যাস ছিল। তাই ঐ সময়টুকু কাটাতে ধূমপান করেন না এমন কোন সহকর্মীদের সাথে গল্প করুন। বই পড়ুন বা হেঁটে আসুন এক চক্কর।

আসলে ধুমপানের ইচ্ছা একেকজন এর বেলায় একেক রকম সময়ে জেগে ওঠে। তবে প্রায় সকল ধুমপায়ীরই নিত্যদিনের কিছু সময় থাকে যখন তার ধুমপানের ইচ্ছা হয়। তাই ওই সময়গুলোতে ইচ্ছেটা দমন করার কিছু টোটকা বাতলে দিচ্ছি আমরা। অফিস, পড়াশোনা বা ঘরের কাজের পর একটু বিরতি পেলেই একটান সিগারেটের জন্য মন আনচান করে উঠে তাই না? তবে এর বদলে কি কি করতে পারেন আসুন সেটাই দেখে নেই-

ফেসবুকে একটু উকি দিন, ইউটিউবে দেখে ফেলুন ছোট্ট কোন ভিডিও। অথবা অফিসের সামনে বা বাসার সামনের রাস্তাটায় একটা চক্কর দিয়ে আসতে পারেন। খুব বেশি সিগারেট খেতে ইচ্ছে হলে খেয়ে নিন আপেলের মত স্বাস্থ্যকর কোন ফল। খেতে পারেন পেয়ারাও। আবার এক গ্লাস পানিও খেতে পারেন।

ধূমপায়ীদের অন্যতম অভ্যাস খাওয়ার পর পর সিগারেট খাওয়া। আপনি জানেন কি? অন্য সময়ের চেয়ে খাওয়ার পরের সিগারেটটি আপনার তিন গুন ক্ষতি করছে! এক্ষেত্রে যা করতে পারেন, খাবার খাওয়ার পর পর স্বাস্থ্যকর কোন ডেজার্ট খেয়ে নিন। আর খাওয়া শেষে সোজা চলে যান প্লেট ধুতে। কোন পাজল বা কুইজে মেতে উঠুন, এতে আপনার মনযোগ ধূমপান থেকে দুরে সরে যাবে।

অফিস বা ক্লাসের ফাকে টং দোকানে দাঁড়িয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতে সিগারেটে টান দেয়ার অভ্যাসটা পুরনোই বলা যায়। সিগারেট ছাড়ার পর এই অভ্যাসটি দূর করতে সামাজিক যোগা্যোগ মাধ্যমে নিউজ ফিডটা ঘুরে আসুন চা বা কফি খেতে খেতে। অবসরে থাকলে বই বা পত্রিকা পড়ুন। এমন বন্ধুর সাথে আড্ডা দিন যে কিনা ধূমপান করেন না। প্রেমিকাকে বা বউকে ফোন দিয়ে বলুন তাকে মিস করছেন। কয়েক মিনিটেরর কথায় চা শেষ হয়ে যাবে।

অনেকেই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য ধূমপান করেন। আপনি হয়ত ভুলেই গেছেন দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত পাওয়ার আরো অনেক উপায় আছে। তাই ধূমপানে মনোযোগ না দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা খুঁজে বের করুন। আবার আপনার দুশ্চিন্তার কারণ নিয়ে কথা বলতে পারেন কোন এক বন্ধুর সাথে। হয়তো তিনি আপনাকে সাহায্য করতে পারবেন। আপনার ফোনে মেডিটেশন অ্যাপ বা মিউজিক ডাউনলোড করে পাঁচ মিনিট মেডিটেশনে মনোযোগ দিন।

কঠিন অপেক্ষা বা ট্রাফিক জ্যামে অনেকেই সিগারেট ধরান। এই সময়টা সিগারেট ছাড়া কাটাতে কোন অডিও বুক বা গানের প্লে লিস্টে নতুন পছন্দের কোন গান ডাউনলোড করে নিন তারপর শুনতে শুনতে পার করে নিন সময়টা। অনেক দিন কথা হয় না এমন কোন বন্ধু বা আত্মীয়কেও ফোন দিতে পারেন। এতে তাদের সাথে সম্পর্কও ঠিক থাকলো আর আপনার সময়ও কাটলো। বাসে থাকলে নতুন কোন বই পড়তে পারেন। চিনিমুক্ত লজেন্স খান বা চুইংগাম চিবান।

তবে আরেকটা কাজ অবশ্যই করবেন। আপনি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছেন জানিয়ে দিন বন্ধুদের। তারা আর এই ব্যাপারে বিরক্ত করবে না। আর যদি করেও তাহলে ওই সব বন্ধুদের এড়িয়ে চলুন। আপনি আপনার সিদ্ধান্তে অটল থাকুন। এমন অনেক উপায় আছে ধূমপান থেকে বাঁচার। একটিতে কাজ না হলে অন্যটি চেষ্টা করুন। তবে আপনি আপনার বেঁছে নেয়া পথেই হাঁটতে থাকুন। কেননা, জীবনটা আপনার, সুস্থতাও আপনার। আর আপনার সুস্থতায় আপনার আশেপাশের মানুষগুলোর মুখেও হাসি ফুটবে।