মিসবাহ-ইউনুসের শেষ, পাকিস্তানের প্রথম

বিদায় বেলায় এর চেয়ে বড় উপহার আর কী পেতে পারতেন মিসবাহ-উল-হক আর ইউনুস খান! ডমিনিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে নেমেছিলেন পাকিস্তানের দুই ব্যাটিং নক্ষত্র। শুধু পাকিস্তানের নয়, বিশ্বক্রিকেটেরই বড় নক্ষত্র মিসবাহ-ইউনুস। বিদায়টাও হয়ে থাকল রঙিন। ‘নখ কামড়ানো’ রোমাঞ্চ ছড়িয়ে ডমিনিকা টেস্টে ১০১ রানের জয় পেয়েছে পাকিস্তান। যাতে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতি নিলো পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে এটা পাকিস্তানের প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়। মিসবাহ- ইউনুসের যেখানে শেষ হলো, সেখানেই ওয়েস্ট ইন্ডিজে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয় পেলো পাকিস্তান।

বিদায় বেলায় কয়েক যুগের এই আফসোস ঘোচানোর গল্পটা হয়তো সারা জীবনই মনে রাখবেন পাকিস্তানের দুই ব্যাটিং কিংবদন্তি। গতকাল টেস্টের শেষ দিনে মাঠের লড়াইটাও অনেকদিন মনে রাখার মতো। জয়ের ভিত্তি পাকিস্তান টেস্টর চতুর্থ দিনেই তৈরি করে রেখেছিল।

পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য নয় উইকেট প্রয়োজন ছিল পাকিস্তানের। ইয়াসির শাহর ঘুর্ণি আর হাসান আলির পেসের দারুণ সমন্বয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট তুলে নিয়ে জয়টা আরও নিশ্চিত বানিয়ে ফেলেছিল পাকিস্তান। কিন্তু রোস্টন চেজ বুক চিতিয়ে এক প্রান্ত আগলে রেখে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। যদিও তার প্রতিরোধ পাকিস্তানের ইতিহাস গড়ার পথে বাঁধা হতে পারেনি। 

২৩৯ বলে ১০১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে টেস্টটা ড্রয়ের একেবারে কাছাকাছিও নিয়ে গিয়েছিলেন চেজ। কিন্তু মিসবাহ-ইউনুসের বিদায় রঙিন হয়ে উঠেছে দিনের শেষ ওভারের আগের ওভারে ইয়াসির শাহর বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ব্যাটসম্যান গ্যাব্রিয়েলের আউট হওয়ার মাধ্যমে। গ্যব্রিয়েলের উইকেট পড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেস্ট জয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথম সিরিজ জয় আর মিসবাহ-ইউনুসকে সেরা বিদায়ী উপহার দিতে পারার উল্লাসে ফেটে পড়েন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। তরুণ সতীর্থদের কাঁধে চড়ে মাঠ ছাড়েন মিসবাহ-ইউনুস।

এক উইকেটে সাত রান নিয়ে পঞ্চম দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ পর্যন্ত গুটিয়ে গেছে ২০২ রানে। পাকিস্তানের হয়ে ইয়াসির শাহ পাঁচ উইকেট নিয়েছেন। পেসার হাসান আলি তুলে নিয়েছেন তিন উইকেট। অপর দুই পেসার মোহাম্মদ আমির ও মোহাম্মদ আব্বাসের ঝুলিতে জমা হয়েছে একটি করে উইকেট। দল হারলেও বীরোচিত লড়াইয়ের জন্য ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন রোস্টন চেজ।

শেষ টেস্টে কেমন করলেন মিসবাহ- ইউনুস

ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে মিসবাহ উল হকের ব্যাট থেকে এসেছে ৫৯ রান। যা তার শেষ আন্তর্জাতিক হাফ সেঞ্চুরি। ইউনুস খান প্রথম ইনিংসে করেছেন ১৮ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে মিসবাহর ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র দুই রান। আর ইউনুস তার ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে করেছেন ৩৫ রান। এরই মাধ্যমে শেষ হয়ে গেলো মিসবাহ- ইউনুসের যুগ।

মিসবাহ পাকিস্তানের হয়ে ৭৫টি টেস্ট, ১৬২টি ওয়ানডে এবং ৩৯টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। টেস্টে তার ব্যাট থেকে ১০ সেঞ্চুরি ও ৩৯ হাফ সেঞ্চুরিতে এসেছে মোট ৫২২২ রান। আর ওয়ানডেতে ৪২ হাফ সেঞ্চুরিতে তিনি করেছেন ৫১২২ রান। ওয়ানডেতে তার কোনো সেঞ্চুরি নেই। টি-টোয়েন্টিতে মিসবাহর সংগ্রহ ৭৮৮ রান। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি আছে তার।

অন্য দিকে ১১৮ টেস্টে ১০০৯৯ রান করেছেন ইউনুস খান। তার ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরির চেয়ে হাফ সেঞ্চুরি বেশি! ৩৪টি সেঞ্চুরির বিপরীতে ৩৩টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। একটি ট্রিপল সেঞ্চুরি করা ইউনুসই পাকিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রান করা ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ সিরিজেই প্রথম পাকিস্তানি হিসেবে ১০ হাজার টেস্ট রানের মাইলফলকে পৌঁছেন তিনি। ইউনুস ওয়ানডে খেলেছেন ২৬৫টি। সাত সেঞ্চুরি ও ৪৮ হাফ সেঞ্চুরিতে এই সংস্করণে তার মোট রান ৭২৪৯। ২৫টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে ইউনুস করেছেন ৪৪২ রান। দুটি হাফ সেঞ্চুরিও আছে তার। 

মিসবাহ উল হক ও ইউনুস খানের বিদায়ে পাকিস্তানের ক্রিকেট থেকে আসলে ঐতিহাসিক এক অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটলো। পাকিস্তান ক্রিকেটের স্বর্ণসময় থেকে বর্তমানের অনিশ্চিত সময় পর্যন্ত, এ দুজনই ছিলেন দলের সেরা ব্যাটসম্যান। তাদের বিদায় নিঃসন্দেহে পাকিস্তান ক্রিকেটে এক শূন্যতার সৃষ্টি করবে।