থামানো যাচ্ছে না, চলছেই সুন্দরবনে হরিণ শিকার

অব্যহত অভিযান এবং নানা আইন করেও থামানো যাচ্ছে না সুন্দরবনের হরিণ শিকারিদের। বাঘের কবল থেকে রেহাই পেলেও চিত্রল হরিণের রেহাই মিলছেন বেপরোয়া শিকারিদের হাত থেকে। ফলে ধীরে ধীরে সুন্দরবনে কমে আসছে চিত্রল হরিণের সংখ্যা।

স্থানীয়রা জানান, প্রশাসন ও বন অধিদপ্তর থেকে হরিণ শিকারে যতোই কঠোরতা আরোপ করা হোক না কেনো এক শ্রেণির মানুষের হরিণের মাংসের প্রতি লোভ এই অবৈধ শিকারে ইন্ধন যুগিয়ে চলেছে। তাই অনেকটা প্রকাশ্যেই সুন্দরবনের আশপাশের এলাকাগুলোতে নিয়মিতই হরিণের মাংস বিক্রি হচ্ছে।

তাছাড়া অনেক ‘শৌখিন’ দাবি করা মানুষও হরিণের চামড়া ও শিং সংগ্রহে রাখার জন্য শিকারিদেরকে হরিণ শিকারে উৎসাহ দিয়ে থাকে। এসব চামড়া ও শিং চড়া দামে কিনে নিয়ে বাসার দেয়ালেই টানিয়ে রাখেন তারা। চড়া দামে এসব কেনা হয় বলে শিকারিরাও অর্থের লোভে হরিণ শিকারে বেপরোয়া হয়ে ওঠছে।

তবে বন বিভাগ জানিয়েছে, শিকারিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে। কিন্তু লোকবলের স্বল্পতা এবং শিকারিদের কাছে থাকা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের বিরুদ্ধে তারা তেমনটা পেরে ওঠছেন না।

স্থানীয়রা বলছেন, মাংস ব্যবসায়ীরা শিকারিদের অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখেন হরিণের মাংসের জন্য। ফলে প্রায়ই হরিণ শিকারে বেপরোয়া হয়ে ওঠছে হরিণ শিকারীরা।

বনের আশেপাশের প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামেই হরিণের মাংস বেচাকেনার গোপন হাট বসে বএ জানান স্থানীয়রা। প্রতি কেজি হরিণের মাংস ৩শ থেকে ৪শ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে এসব হাটে। এসব গ্রামের মধ্যে রয়েছে মংলার জয়মনি, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, ধানসাগর, চিলা, বাঁশতলা, বগি, বৌদ্ধমারী, কাটাখালী, দাকোপের ঢাংমারী, বানিশান্তা, খাজুরা, সাতক্ষীরা, খুলনার কয়রা, আংটিহারা ইত্যাদি গ্রাম।

মংলার জয়মনির ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, হরিণ শিকার করতে শিকারিরা ফাঁদ, বিষ, টোপ ইত্যাদি ব্যবহার করে। তবে মাঝে মাঝে আগ্নেয়াস্ত্রও ব্যবহার করে তারা। শিকারিরা জেলেদের ছদ্মবেশে বনের গহীনে প্রবেশ করে। ফলে তাদের চিহ্নিত করাটা কষ্টকর।

খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা চৌধুরী আমির হোসেন জানান, বন ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সুন্দরবনকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) আওতায় আনা হয়েছে। সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে বাকি অংশেও এই ব্যবস্থা চালু হবে। এর ফলে খুব সহজেই বনকর্মীসহ হরিণ শিকারিদের কাজের গতিবিধি লক্ষ্য করা যাবে।

উল্লেখ্য, গত ৩ মে কয়রা ও আংটিহারা এলাকা থেকে ৫১ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন। পরে জব্দ করা মাংস ধ্বংস করা হয়।