সেই ‘ভয়াবহ দুর্ঘটনা’র আজ চার বছর

ঠিক চার বছর আগে আজকের এই দিনে বাংলাদেশে ঘটেছিল শিল্পক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের এই দিনে সাভারে আটতলা ভবন ধসে পাঁচটি পোশাক কারখানার ১০৩৫ জন শ্রমিক নিহত হয়। আজ সকালে সেই নিহত শ্রমিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ঘটনাস্থলের সামনে অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন।

বহুল আলোচিত রানা প্লাজা ধসের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে এদিন বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন সাভারে শ্রদ্ধা জানাতে যায়। সেসময় সেখানে উপস্থিত সাঁজোয়া যানসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ তাদের একত্রিত হতে বাধা প্রদান করে। অস্থায়ী বেদির সামনে শ্রমিকরা জড়ো হতে চাইলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ বিশৃঙ্খলা রোধ করতে এমন করেছে বলে জানায়।

রানা প্লাজার নিহতদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানোর সময় কাউকে বেশিক্ষণ থাকতে না দিয়ে সারিবদ্ধভাবে একে একে সবাইকে বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যাওয়ার জন্য তাগিদ দেয় পুলিশ। এদিকে অতিরিক্ত যানসহ বিপুল পুলিশ মোতায়েনের কারণ জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি সাঁজোয়া যান প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।‘

শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে শ্রমিক সংগঠনসমূহ এবং রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের স্বজনেরা বকেয়া ক্ষতিপূরণ এবং উক্ত ঘটনায় অভিযুক্ত রাঁনার ফাসি দাবি করেন।

উল্লেখ্য, রানা প্লাজা ট্রাজেডি ঘটনায় হত্যা ও ইমারত নির্মাণ আইনে ৪১ জনের বিরুদ্ধে করা মামলার অভিযোগ পত্র দাখিল করলেও হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের কারণে এখনও চার্জ গঠন করা যাচ্ছে না। তবে শ্রমিক নেতারা অভিযোগ করেছেন মামলার ৪১ জন আসামির মধ্যে ৩৯ জন জামিনে বাইরে থাকায় তারা মামলার কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছন। ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিলের সেই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় রানা প্লাজার পাঁচটি পোশাক কারখানার প্রায় ১০৩৫ জন শ্রমিক নিহত এবং আরও হাজারখানেক শ্রমিক আহত হয়েছিল।

রানা প্লাজার ৪২ শতাংশ শ্রমিক এখনো বেকার

রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের শারীরিকি ও মানসিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় এখনো প্রায় ৪২ দশমিক ২ শতাংশ বেকার রয়ে গেছে বলে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত এক হাজার ৪০৩ জন শ্রমিক ও ৬০৭ জন মৃত শ্রমিকের পরিবারকে নমুনা ধরে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশনএইড  ‘অবিস্মরণীয়, অমার্জনীয়: রানা প্লাজা’ শীর্ষক গবেষণা চালায়। সংস্থাটির ব্যবস্থাপক নুজহাত জেবিন শনিবার ব্র্যাক সেন্টারে গবেষণার নানা দিক উপস্থাপন করেন।

গবেষণায় দেখা যায়, ২০১৩ সালে ভয়াবহ রানা প্লাজা ধসে আহতদের মধ্যে ৫৭ শতাংশ শ্রমিক বিভিন্ন কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত হলেও ৪২ দশমিক ২ শতাংশ এখনো বেকার রয়েছে। এদের মধ্যে ২৬ শতাংশ কর্মসংস্থানের কোন পরিকল্পনাই করতে পারছেন না।

দুর্ঘটনায় আহতদের মধ্যে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছেন, স্থিতিশীল অবস্থা রয়েছে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ১৩ দশমিক ১ শতাংশের শারীরিক অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি।

তাছাড়া আহতদের ৫৭ দশমিক ২ শতাংশ মানসিকভাবে সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও ৩০ দশমিক ৮ শতাংশের মানসিক অবস্থা ভালো নয়। এর মধ্যে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছেন ১২ শতাংশ মানুষ।

গবেষণার প্রতিবেদনে আহত শ্রমিকদের এই মানসিক ও শারীরিক অবস্থাকেই দায়ী করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ ১১০০ জনের বেশি প্রাণ হারায়। অসংখ্য শ্রমিক ধ্বংসস্তুপের নিচের পড়ে গুরুতরভাবে আহত ও পঙ্গু হওয়ার পাশাপাশি নিখোঁজ রয়ে গেছেন।