আপনি পড়ছেন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়ার দুই ‘পাগলাটে’ শাসক ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কিম জং উনের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনা এবং যুদ্ধোংদেহী মরণাস্ত্র প্রদর্শনীতে অস্বস্তিতে পুরো বিশ্ব। উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সামরিক শক্তি নজিরবিহীনভাবে বাড়ানোর ক্ষেত্রে অনমনীয় ও হঠকারী মনোভাবের ফলে ক্রমশ বাড়তে থাকা উত্তেজনায় এ দুদেশের মধ্যে যে কোন মুহূর্তে প্রবল যুদ্ধ বেধে যাওয়ার শঙ্কা প্রবল।

trump vs kim jong

ইতিমধ্যে উত্তর কোরিয়া তাদের নাগরিকদের রাজধানী থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া শুরু করেছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে শীঘ্রই আরেকটি যুদ্ধের বাদ্য শুনতে পেতে পারে বিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্র-কোরিয়া যুদ্ধ যদি বেধেই যায় তবে সামরিক শক্তিমত্তায় কে কতক্ষন টিকে থাকতে পারবে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিতর্ক। সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, কর্মদক্ষতার দিক বিবেচনায় উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর অবস্থান বর্তমানে বিশ্বে পঞ্চম। এছাড়াও সংখ্যার বিচারে কোরিয়ান সেনাবাহিনী বিশাল বড় এবং কার্যক্ষম। সম্প্রতি পরমাণু বোমা মেরে যুক্তরাষ্ট্রকে ধুলিস্মাৎ করে দেওয়ার হুমকি দেয় উত্তর কোরিয়ার অস্থির ও আক্রমণাত্বক নেতা কিম জং উন। এরই অংশ হিসেবে গত কিছুদিনে তার নির্দেশে বেশ কয়েকবার দূর পাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শণী করা হয়। জবাবে যুক্তরাষ্ট্রও পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পাল্টা জবাব দিয়ে তাদের সক্ষমতা প্রদর্শণ করেছে।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, ১০ লক্ষ কার্যক্ষম নিয়মিত সেনাবাহিনী এবং ৪০ লক্ষ থেকে ৭০ লক্ষ অনিয়মিত মজুদ সেনার বিরাট স্থলবহর থাকলেও উত্তর কোরিয়ার বিমান ও নৌবাহিনীর সক্ষমতা রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় কম। বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রায়ই জ্বালানি তেলের স্বল্পতার কারণে উত্তর কোরীয় বিমান বাহিনী তাদের সব বিমান চালাতে পারে না। একারণে তাদের বিমানবাহিনীর পাইলটদের আকাশে যুদ্ধ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতাও তূলনামূলক কম। প্রায় একই অবস্থা দেশটির নৌবাহিনীরও।

তবে দূরবর্তী স্থাপনায় নিক্ষেপনযোগ্য পারমাণবিক ক্ষেপনাস্ত্র তৈরি করে এই দুর্বলতা অনেকটা পুষিয়ে নিয়েছে দেশটি। সম্প্রতি মার্কিন বিমানবাহী রণতরী কোরিয়া অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে আক্রমণ মোকাবিলায় পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি দিয়ে বসে কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান সং রিয়ল মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)-কে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী পারমাণবিক বোমার মজুদ রয়েছে। আর মার্কিন হামলার মুখে আমরা নিশ্চিতভাবেই সে অস্ত্রগুলো কোলে করে নিয়ে বসে থাকবো না। মার্কিন বিমান বাহিনী যদি আক্রমণ করে তবে আমরা তার সমুচিত জবাব দিবো। ‘ তিনি আরও জানান যে, উত্তর কোরিয়া উন্নত মানসম্পন্ন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে কখনো সরে আসবে না।

উত্তাল বিশ্ব রাজনীতির পরিমণ্ডলে সমাজতান্ত্রিক ও মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী কমিউনিস্ট শাসিত এই দেশটি পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জন করে আমেরিকার মাথাব্যথা বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক আগেই। খবরে প্রকাশ, উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সাংয়ের ১০৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সামরিক মহড়ায় দুটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের প্রদর্শনী করেছে দেশটি। পাঁচ হাজার ৫০০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে এ ক্ষেপণাস্ত্র দুটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে যেকোন স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের বিবেচনায় বিষয়টা হাল্কাভাবে নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছে, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এ পর্যন্ত পাঁচ দফা পরমাণু বোমা পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। এছাড়া, ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাও অব্যাহত রেখেছে দেশটি। আর এসব অস্ত্র প্রদর্শণীর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই পারমানবিক বোমার বাইরে তাদের সবচেয়ে বড় বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটালো আফগানিস্তানে। আফগানিস্তানের মাটিতে ল্যাব টেস্ট করা এই শক্তিশালী অস্ত্র পরীক্ষায় নিহত হলো ৯০ জন। যদিও আমেরিকার দাবি সেটা আইএস এর ঘাঁটি ছিলো এবং আফগানিস্তানের প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ বলছেন, 'আফগান সরকারের সমন্বয়েই এ হামলা চালানো হয়েছে’। কিন্তু আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এ হামলার নিন্দা জানিয়ে টুইট করেছেন এই বলে, 'এটি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়, বরং এর মাধ্যমে নতুন এবং বিপজ্জনক একটি অস্ত্র পরীক্ষার জন্য আফগানিস্তানকে খুবই অমানবিক এবং নির্মমভাবে ব্যবহার করা হয়েছে’।

দু দেশের মধ্যে উদ্ভূত সংকট নিরসনের জন্য ৬০ বছরের পুরনো কোরিয়ান ওয়ার আর্মিস্টাইস অ্যাগ্রিমেন্টকে প্রতিস্থাপন করে কোরীয় উপদ্বীপকে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করে শান্তিচুক্তি সই করার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা বন্ধ করতে এবং একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া বন্ধ করে সব পক্ষকে আলোচনার টেবিলে আসতে আহ্বান জানিয়েছে চীন।

এখন দেখার বিষয় যুক্তরাস্ট্র এবং উত্তর কোরিয়া চীনের এই প্রস্তাব শুনবে তো? নাকি পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক মেরুর পাল্টাপাল্টি আক্রমণে আরেকটি মহারণ দেখবে সমগ্র বিশ্ব?

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.