জঙ্গিবিরোধী অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন পুলিশ-র‌্যাবের ৯ সদস্য

জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে যেয়ে এ পর্যন্ত পুলিশ ও র‌্যাবের মোট ৯জন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। ২০১৬ সালের পবিত্র রমজান মাসে রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারী থেকে সর্বশেষ সিলেটে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করতে যেয়ে তাদের মৃত্যু হয়। তবে ৯ জন সহকর্মী প্রাণ দিলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনোই জঙ্গি দমনে পিছপা হবে না বলে কঠোর অঙ্গীকার করেছেন পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

আজ ১ এপ্রিল শনিবার মৌলভীবাজারের বড়হাটে জঙ্গি আস্তানায় 'অপারেশন ম্যাক্সিমাস' সফলভাবে শেষ করে অভিযান সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, জঙ্গিবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদসহ পুলিশ সদস্যদের হত্যার সাথে জড়িত জঙ্গিদের ফাঁসিতে ঝুলানোর ইচ্ছা ছিল আমাদের। কিন্তু তারা প্রাকৃতিক শাস্তি পেয়ে গেছেন। আর যারা বাকি ছিলেন তারাও পরবর্তী অভিযানগুলোতে নিহত হয়েছেন।'

তিনি বলেন, 'সিলেটের আতিয়া মহলের কাছে বিস্ফোরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন জন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন, লে. কর্নেল আজাদ, ইন্সপেক্টর মনিরুল ও ইন্সপেক্টর কয়সর। বাইরে থেকে যে জঙ্গিরা তাদের উপর হামলা করেছিল তারাও নাসিরপুরের অভিযানে নিহত হয়েছে।'

মনিরুল ইসলাম বলেন, 'সিলেটের আতিয়া মহলের বাইরে হামলাকারী জঙ্গির আস্তানা ছিল মৌলভীবাজারে। মৌলভীবাজার থেকে গিয়ে আতিয়া মহলের কাছে ওই বিস্ফোরণ হামলাকারী আবার মৌলভীবাজারের আস্তানায় ফিরে আসে। মৌলভীবাজারের জঙ্গি আস্তানায় বিস্ফোরক এক্সপার্টসহ মধ্যম সারির দুই পুরুষ জঙ্গি ও এক নারী জঙ্গি অবস্থান করছিল বলে জানতে পারার পরপরই আমরা বড়হাটের জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাই এবং সেখানেও দ্রুত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেই।'

তিনি বলেন, 'সোয়াট যখন অভিযান চালাতে শুরু করে তখন এক নারী জঙ্গি ছাদে উঠে পরপর দুটি গ্রেনেড ছুড়ে মারে। গ্রেনেড দুটির একটি বিস্ফোরিত হয় এবং অপরটি পাশের ধান ক্ষেতের মধ্যে পড়ায় তা অবিস্ফোরিত থেকে যায়। জঙ্গিদের এ হামলার আশঙ্কা থেকে সোয়াটের কমান্ডোরা সতর্কভাবে অভিযান পরিচালনা করে। ফলে কিছুটা সময় বেশি লেগেছে।'

তিনি বলেন, 'আমরা জঙ্গিদের জীবিত ধরার চেষ্টা করেছি। তাদের আত্মসমর্পণের জন্যও বলেছি। তাদের বেরিয়ে আসার সুযোগও দিয়েছি। কিন্তু তারা আত্মসমর্পণ না করে পাল্টা হামলা চালায়। সেয়াত সদস্যরা তাদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই তারা বড় মাপের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে ঘটনা স্থল থেকে দুই পুরুষ জঙ্গি ও এক নারী জঙ্গির লাশ পাওয়া যায়।'

বড়হাটের জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী এই অভিযান গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করে মনিরুল ইসলাম বলেন, 'দেশ ও মানবতা বিরোধী এসব জঙ্গিদের দমন করা আমাদের পক্ষে কঠিন হবে না। যদি সাধারণ মানুষ আমাদের সাহায্য করে তাহলে জঙ্গিবাদ এদেশে কখনো প্রতিষ্ঠিত হবে না।'