বিশ্ব গণমাধ্যমে সিলেটের সংবাদ

টানা চারদিন ধরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ‘আতিয়া মহল’ জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো বাহিনীর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নানা কৌশলে প্যারা কমান্ডো বাহিনী চেষ্টা চালাচ্ছে বাড়িটি দখলে নেওয়ার। কিন্তু জঙ্গিরা ভবনটিতে বিস্ফোরক দ্রব্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখায় অভিযানটি সম্পন্ন করতে সময় লাগছে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে দুই জঙ্গির মারা যাওয়ার খবর জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

সিলেটের এই অভিযানের খবর বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। চলুন জেনে নেই, কি সংবাদ প্রকাশ করেছে বিশ্ব গণমাধ্যম:

শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টা ও সাড়ে ৭টায় দুটি বোমা বিস্ফোরণে পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পরই ‘বাংলাদেশের বোমা বিস্ফোরণে নিহত ৬, আহত বহু’ শিরোনামে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে পুলিশের বরাত দিয়ে বলা হয়, শনিবার বাংলাদেশে একটি জঙ্গি আস্তানার কাছে বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ কমপক্ষে ছয়জন নিহত ও বহু আহত হয়েছেন। ওই আস্তানায় এখন কমান্ডো অভিযান চলছে। রয়টার্স জানায়, জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে আরো বলছে, চলতি মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর ঘাঁটিতে আত্মঘাতী হামলা বেড়ে যাওয়ায় সিলেটে ওই অভিযান চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।

প্রভাবশালী ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সিলেটে ভিড়ের মাঝে দুটি বোমা বিস্ফোরণে ছয়জন নিহত ও কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে দেশটির সেনাবাহিনী একটি জঙ্গি আস্তানাকে লক্ষ্য করে কমান্ডো অভিযান চালাচ্ছে। জঙ্গি আস্তানা থেকে ৪০০ গজ দূরে পুলিশ ও শত শত উৎসুক জনতা পাঁচতলা একটি ভবনে জঙ্গিবিরোধী কমান্ডো অভিযান দেখছিলেন। উৎসুক জনতাকে লক্ষ্য করে ওই শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। সিলেট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আতিকুল ইসলামের বরাত দিয়ে এএফপি জানায় বিস্ফোরণে আহত বেশ কয়েকজনের অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান এএফপিকে বলেন, সাধারণ মানুষকে উদ্ধার করাই ছিল আমাদের প্রধান কাজ। আমরা তা সফলভাবে করতে পেরেছি। আমরা মোট ৭৮ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করতে পেরেছি। চলতি মাসে দেশটির বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পুলিশের এলিট ইউনিটের সদস্যরা একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে দেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠী জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের এক নারী সদস্যসহ চারজনকে হত্যা করে। এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। অবশ্য ২০১৫ সাল থেকে দেশটিতে বিভিন্ন হামলা ও হত্যার দায় স্বীকার করে আসছে আইএস। এর মধ্যে গত বছর ঢাকার একটি ক্যাফেতে হামলায় ২২ জনকে হত্যার দাবি করে এই জঙ্গিগোষ্ঠী। নিহতদের ১৮ জনই বিদেশি জিম্মি ছিলেন। তবে বাংলাদেশ সরকার বরাবরের মত দেশে আইএসের উপস্থিতি অস্বীকার করে আসছে। সরকার বলছে, দেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠী জেএমবির নব্য শাখার সদস্যরা এসব হামলায় জড়িত।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি-র শিরোনাম ‘বাংলাদেশে জঙ্গি অভিযানের মাঝেই সিলেটে বিস্ফোরণে নিহত ৪’। সংবাদ মাধ্যমটি বলছে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জোড়া বোমার বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও চার জন বেসামরিক নাগরিকসহ মোট ছয়জন নিহত হয়েছে। দেশটির সিলেটের একটি ভবনে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় এখনো কমান্ডো অভিযান পরিচালনা করছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। বিবিসি জানায়, এর আগে ওই ভবন থেকে অনেক বেসামরিক নাগরিককে বের করে আনা হয়েছে। সন্দেহভাজন জঙ্গিরা আত্মসমর্পন করবে না বলে জানিয়েছে। শনিবারের জোড়া বিস্ফোরণে কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট ওই ভবনটি ঘিরে রেখেছে।

পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসির ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, একটি মটরসাইকেলে করে দুই ব্যক্তি ঘটনাস্থলে বিস্ফোরক ডিভাইস নিয়ে আসার পরপরই তা বিস্ফোরিত হয়। পরে সেখানে সবজির ব্যাগের মধ্যে রাখা দ্বিতীয় বোমার বিস্ফোরণ ঘটে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় বোমা বিস্ফোরণে এক পুলিশ কর্মকর্তাসহ অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে।

এছাড়াও ভারতের এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, পাকিস্তানের ডন, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালসহ বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিলেটে জঙ্গি আস্তানায় কমান্ডো অভিযান ও বিস্ফোরনে হতা-হতের খবর গুরুত্বসহকারে প্রকাশ পেয়েছে।