পুলিশকে প্রধান উপদেষ্টা: জনগণের আস্থা ফেরান, সুষ্ঠু নির্বাচনে ভূমিকা রাখুন

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পুলিশ বাহিনীকে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

ছবি - সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি পুলিশের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে – জনবল ও লজিস্টিক সংকট, অপ্রতুল বাজেট ইত্যাদি। কিন্তু গত ১৬ বছরে পুলিশ ও জনগণের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা কমিয়ে আনা এবং পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুজ্জীবিত করাই আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।’

প্রধান উপদেষ্টা আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে পুলিশ সপ্তাহ-২০২৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা কঠিন নয় এবং সকল স্তরের প্রচেষ্টায় এই দূরত্ব কমে আসবে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে পুলিশকে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে এবং সরকার এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে।

আগামী সাধারণ নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে তার দেওয়া বিভিন্ন বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানে পুলিশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জনগণ যাতে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, তেমন পরিবেশ তৈরি করা সকলের দায়িত্ব।

তিনি নির্বাচনের সময় সকল প্রার্থীর প্রতি সমান আচরণ প্রদর্শনের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গত আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো নাজুক অবস্থায় ছিল।

তিনি বলেন, জনগণ ও পুলিশের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল এবং সে কারণেই সরকার পরিস্থিতির উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তিনি আরও বলেন, সড়কে মানুষের ভোগান্তি কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং পুলিশের মানসিক শক্তি বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্দীপনামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, পুলিশের কঠোর পরিশ্রমে দুর্গাপূজা, বিশ্ব ইজতেমা, ঈদুল ফিতর, বাংলা নববর্ষ এবং অন্যান্য উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর গৃহীত প্রচেষ্টার ফলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

প্রধান উপদেষ্টা নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পুলিশকে জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এবং নিশ্চিত করতে বলেন যেন সকল শ্রেণি-পেশার নারীরা পুলিশ হটলাইনে ফোন করে সহায়তা পান।

দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগ মুহূর্তে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা প্রথমবারের মতো সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন এবং এই ইতিহাস ভুলে যাওয়ার নয়।

তিনি যোগ করেন, বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে এটি এক বিরাট গৌরবের অধ্যায়।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ পুলিশ সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং কোনো বৈষম্য থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, এই আকাঙ্ক্ষা পূরণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচারী (আওয়ামী লীগ) সরকারের শাসনামলে পুলিশ বাহিনীকে দলীয় শক্তি হিসেবে ব্যবহার করায় দেশের সকল ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, স্বৈরাচারী (আওয়ামী লীগ) সরকারের অবৈধ ও অন্যায্য আদেশ পালন করতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী ব্যাপকভাবে জনগণের রোষানলে পড়েছিল, এবং অনেক সৎ পুলিশ সদস্যকে এর জন্য মূল্য দিতে হয়েছে।