ড. ইউনূস: জুনের মধ্যেই নির্বাচন, ডিসেম্বরেও হতে পারে

দেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে সংস্কার প্রক্রিয়ার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে চলতি বছরের ডিসেম্বরেও আগাম নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি সোমবার প্রচারিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ভর করবে কী পরিমাণ সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে সকলে একমত বা দ্বিমত পোষণ করেন তার ওপর। যদি বেশি সংখ্যক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হয়, তাহলে বেশি সময় লাগবে। যদি আমরা সংস্কার বাস্তবায়নের একটি সংক্ষিপ্ত রূপরেখায় মনোযোগ দিতে পারি, তাহলে ডিসেম্বরেই আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।’

তবে প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হলে জুন মাস পর্যন্ত সময় নেওয়া হবে উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই জুনের পর আর যাওয়া হবে না।’ ড. ইউনূস প্রতিশ্রুতি দেন যে, এই নির্বাচনটি হবে দেশের ইতিহাসের সেরা নির্বাচন।

সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস জানান, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। ‘আমরা এখনো জানি না, তারা (আওয়ামী লীগ) এখনো কিছু ঘোষণা করেনি,’ তিনি বলেন। তাদের ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনের প্রতিক্রিয়া এবং অন্যান্য দলের সম্ভাব্য আপত্তির বিষয়গুলো সামনে আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনগণের সমর্থনের তথাকথিত ‘মধুচন্দ্রিমা পর্ব’ শেষ হয়েছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জনগণ এখনো অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি ভালো সমাধান হিসেবে দেখছে এবং দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য কোনো চাপ নেই।’

‘তারা বলছে না যে অন্তর্বর্তী সরকার চলে যাক, আজই নির্বাচন হোক... জনগণ বলছে যে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করুন - এমন কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা হইনি’ তিনি যোগ করেন।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং নিজেকে ‘বৈধ প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করা প্রসঙ্গে ড. ইউনূস জানান, ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার কথা হয়েছে। তিনি মোদিকে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ভারতে থাকতে পারেন, কিন্তু সেখান থেকে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়া বা উস্কানি দেওয়া উচিত নয়, কারণ এটি বাংলাদেশে সমস্যা তৈরি করছে। তিনি বাংলাদেশে থাকা মানুষদের উস্কানি দেওয়ার জন্য ভাষণ দিচ্ছেন, এবং এর ফল আমাদের ভোগ করতে হচ্ছে।

মোদির প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানান, মোদি বলেছেন ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবার জন্য উন্মুক্ত এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে ভারতের কাছ থেকে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি বলেও তিনি জানান।

ড. ইউনূস আরও জানান, শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তবে এখনো জবাব মেলেনি। আইনি প্রক্রিয়া শুরু হলে আদালত নোটিশ জারি করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, এটি দুই দেশের নিজেদেরই সমাধান করতে হবে। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ভারতের আগে চীন সফর করে কোনো বার্তা দেননি উল্লেখ করে বলেন, যেসব দেশ সফরে তিনি ইচ্ছুক, সেখানেই যাচ্ছেন। ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেও সাড়া না পাওয়ায় চীন ও পরে মালয়েশিয়া সফর করছেন বা করবেন বলে জানান। সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যের কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

ভারত তাকে উপেক্ষা করছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি উপেক্ষা বলব না। এটা হয়তো একটা সাময়িক বিষয়... যা আমাদের একসঙ্গেই সমাধান করতে হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, বর্তমান মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে তার সরকারের অত্যন্ত ভালো, শক্তিশালী ও উষ্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান এবং বেইজিং বা ওয়াশিংটনের মধ্যে কোনো একটিকে বেছে নেওয়ার চাপ নেই, কারণ সবাই বাংলাদেশের বন্ধু।

সাক্ষাৎকারের শেষে তিনি বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে বিদেশি সরকারগুলোর সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।