সাংবিধানিক কাউন্সিলে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতির অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা জামায়াতের

প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলে দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির অন্তর্ভুক্তির বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শনিবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলটির প্রথম দিনের সংলাপ শেষে এই অবস্থানের কথা জানান জামায়াতের প্রতিনিধিদলের প্রধান ও দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর লোগো

রাজধানীর জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সংলাপ শেষে তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘জরুরি অবস্থায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির ভূমিকার কথা বিবেচনা করে আমরা প্রস্তাবিত সাংবিধানিক কাউন্সিল থেকে তাদের বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছি।’

জামায়াতের এই নেতা আরও জানান, তাদের আলোচনা ওই দিন শেষ হয়নি এবং পরবর্তী সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ওপর তারা জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের ব্যাপারে আমরা একমত হয়েছি। তবে, আমরা সংরক্ষিত ৫০টি নারী আসনের নির্বাচন প্রচলিত পদ্ধতিতে এবং বাকি ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে করার সুপারিশ করেছি।’

তাহের আরও জানান, একজন ব্যক্তির সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকার বিষয়ে কমিশনের সুপারিশেও তাদের দল একমত হয়েছে।

উল্লেখ্য, সাংবিধানিক সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদের দুই চেম্বারের স্পিকারদ্বয়, প্রধান বিচারপতি, বিরোধীদল মনোনীত ডেপুটি স্পিকার এবং সরকারি বা বিরোধী দলের অন্তর্ভুক্ত নন এমন একজন সংসদ সদস্যকে রাখার প্রস্তাব করেছে। কমিশন জাতীয় সংসদের নিম্নকক্ষে ১০০টি সংরক্ষিত নারী আসনেরও প্রস্তাব করেছে।

গত ৫ মার্চ, সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন এবং দুদক সংস্কার সংক্রান্ত কমিশনগুলোর মূল সুপারিশ সংকলনকারী জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে ১৬৬-দফা সম্বলিত একটি প্রশ্নমালা বিতরণ করে সুপারিশগুলোর বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিল। প্রশ্নমালায় সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য ছয়টি বিকল্প প্রস্তাব করা হয়, যার মধ্যে অধ্যাদেশ বা গণভোট, গণকাউন্সিল, নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কার অথবা দ্বৈত ভূমিকাসম্পন্ন সংসদ গঠনের মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত।

এক প্রশ্নের জবাবে তাহের জানান, ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য কোন পদ্ধতি পছন্দ, তা জামায়াত পরে জানাবে।

এর আগে, সকাল ১১টায় সংলাপ শুরু হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ভাইস-চেয়ারম্যান আলী রীয়াজ জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে জামায়াত কর্মীদের অবদানের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘সংস্কার গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এমন একটি দেশ গড়তে আকাঙ্ক্ষা রাখি যেখানে জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা কোনো ধরনের নিপীড়নের শিকার হবে না।’

সূচনা বক্তব্যে সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতা যাতে অতীতের মতো ব্যর্থ না হয় সেজন্য রাজনীতিবিদদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। তিনি ১৯৪৭ ও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট ‘বিপ্লবের’ মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা বা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, কিন্তু আমরা আসলে কতটা স্বাধীন হতে পেরেছি, তা সময়ই বলে দেবে।’