সৌদি আরব ও সুন্নিদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য: ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির প্রধান বরখাস্ত

সুন্নি মুসলমান ও সৌদি আরবের বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের জের ধরে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের (আইআরআইবি) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও তার নির্বাহী সহকারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ঘটনায় আরও আট কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট মনিটর কুয়েতি সংবাদপত্র আল-জারিদার বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে।

ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিং (আইআরআইবি)

আল-জারিদার শুক্রবারের প্রতিবেদন অনুসারে, আইআরআইবির প্রধান পেইমান জেবেইলি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রথম চ্যানেলের পরিচালক ও তার সহকারীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় টিভিতে প্রচারিত একটি পারিবারিক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সুন্নি বিশ্বাস নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার পর ইরানে ব্যাপক অসন্তোষ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তীব্র চাপের মুখেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বরখাস্ত ও মামলার এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম।

আইআরআইবির প্রধান ও সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির সরাসরি প্রতিনিধি পেইমান জেবেইলি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ইরানের জাতীয় রেডিও ও টেলিভিশনের প্রধান দায়িত্ব হলো জাতির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা, বিভেদ সৃষ্টি নয়। ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কাজ করা প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্ব, এবং রাষ্ট্রীয় চ্যানেলগুলোর কর্তব্য তাদের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই আদর্শকে তুলে ধরা।’

তবে পর্যবেক্ষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বরখাস্তের নেপথ্যে মূল কারণ ছিল 'সাহার' নেটওয়ার্কে প্রচারিত একটি অনুষ্ঠান। এতে একটি কার্টুন চরিত্রের মাধ্যমে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানকে অবমাননা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। যদিও অনেকে মনে করেন, কার্টুনটির চেহারার সঙ্গে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সাদৃশ্য ছিল।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের প্রথম চ্যানেলে অনুষ্ঠানটির একটি ছবি সম্প্রচারিত হওয়ার পর ইরানজুড়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে, সম্প্রতি সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স খালিদ বিন সালমানের তেহরান সফরের পরপরই এমন ঘটনা ঘটায় দেশটির রাজনীতিবিদদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মার্চে চীনের মধ্যস্থতায় সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি এবং সেপ্টেম্বরে পুনরায় কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে ইরান ও সৌদি আরবের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, এই সাম্প্রতিক ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কের অগ্রগতিকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করতে পারে।