ইইউ’র ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ, কঠিন হবে বাংলাদেশিদের জন্য
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সাতটি দেশকে নিরাপদ উৎস দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশসহ তালিকাভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের ইউরোপে আশ্রয়ের আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে, যা মূলত আবেদন প্রত্যাখ্যানের প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও তালিকায় থাকা অন্য ছয়টি দেশ হলো কসোভো, কলম্বিয়া, মিশর, ভারত, মরক্কো এবং তিউনিশিয়া।
বাংলাদেশের পাসপোর্ট
ইউরোপীয় কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো গত বছর গৃহীত ‘অভিবাসন ও আশ্রয় চুক্তি’র কিছু অংশ দ্রুত বাস্তবায়ন করা, যা মূলত ২০২৬ সালের জুন মাস থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, এই সাতটি দেশ থেকে যাওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনগুলো ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ধরে নিয়ে তা তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে।
ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়। তবে, বহু আবেদনই শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। ইইউ’র নতুন নিয়মে এই প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হবে এবং আবেদন নাকচ হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও গতি পাবে।
তবে ইউরোপীয় কমিশনের মুখপাত্র মার্কুস লামার্ট জানিয়েছেন, এটি একটি ‘গতিশীল তালিকা’ যা সময়ে সময়ে পর্যালোচনা ও হালনাগাদ করা হবে। কোনো দেশকে নিরাপদ মনে না হলে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া বা স্থগিত করা হতে পারে।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
২০১৫-১৬ সালে ইউরোপে বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর প্রবেশের পর থেকেই আশ্রয় নীতি সংস্কারের চাপ ছিল। ২০২৩ সালেও প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার অবৈধ অভিবাসী ইইউ’র বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে। দীর্ঘ আলোচনার পর গত বছর ইউরোপীয় পার্লামেন্ট অভিবাসন ও আশ্রয় সংক্রান্ত আইন কঠোর করে একটি সংস্কার অনুমোদন করে। যদিও এটি ২০২৬ সাল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর চাপ কমাতে এবং অমূলক বা ভিত্তিহীন আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দুটি মূল নিয়ম আগেভাগেই কার্যকর করতে চাইছে ইইউ।
এর একটি বড় কারণ হলো, ইইউ’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যাদের আশ্রয় আবেদন নাকচ করে নিজ দেশে ফেরত যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়, তাদের মাত্র ২০ শতাংশেরও কম সংখ্যককে বাস্তবে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়। গত বছর ইইউ নেতারা কমিশনকে অভিবাসীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা তৈরির অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
যে দুটি দিক দ্রুত কার্যকর করার প্রস্তাব করা হয়েছে:
১. যেসব দেশের আশ্রয় আবেদনকারীদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা পাওয়ার হার গড়ে ২০ শতাংশ বা তার কম, সেসব দেশের ক্ষেত্রে সদস্য রাষ্ট্রগুলো ‘সীমান্ত প্রক্রিয়া’ বা ‘দ্রুত প্রক্রিয়া'’ অনুসরণ করতে পারবে।
২. নিরাপদ তৃতীয় দেশ ও নিরাপদ উৎস দেশ চিহ্নিত করা যাবে, যা সদস্য দেশগুলোর জন্য আবেদন যাচাই প্রক্রিয়া সহজ করবে, যদিও কিছু ব্যতিক্রম থাকবে।
ইউরোপীয় কমিশনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক ও অভিবাসন কমিশনার ম্যাগনাস ব্রুনার বলেন, ‘যেখানে আমরা দ্রুত এগোতে পারি, সেখানে আমাদের আরও দ্রুত এগিয়ে যাওয়া উচিত... আশ্রয়ের সিদ্ধান্ত দ্রুতগতিতে নিতে যেভাবে সহযোগিতা করা সম্ভব তা করাটা অপরিহার্য।’
বাংলাদেশিদের জন্য শঙ্কা
ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী পাঠানো দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম শীর্ষস্থানীয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এজেন্সি ফর অ্যাসাইলামের তথ্যমতে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালের সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ ছিল ষষ্ঠ শীর্ষ দেশ। সিরিয়া, আফগানিস্তান, ভেনেজুয়েলা, তুরস্ক ও কলম্বিয়ার পরই বাংলাদেশের অবস্থান।
২০২৪ সালে ৪৩ হাজার ২৩৬ জন বাংলাদেশি আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেন এবং প্রায় ৪৭ হাজার ৭৭৮টি আবেদন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ছিল। তবে বাংলাদেশিদের আশ্রয় আবেদন সফল হওয়ার হার অত্যন্ত কম, মাত্র ৩.৯৪ শতাংশ। ৯৬ শতাংশেরও বেশি আবেদন ব্যর্থ হয়, যা ইইউ’র প্রস্তাবিত ২০ শতাংশ সফলতার হারের চেয়ে অনেক নিচে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ শরীফুল হাসান মনে করেন, বাংলাদেশকে 'নিরাপদ' দেশ হিসেবে চিহ্নিত করায় প্রকৃত ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও আশ্রয় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ‘ইউরোপ মনে করছে বাংলাদেশে এখন আর আগের মতো সহিংসতা বা রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। এর ফলে যারা কাজের জন্য বা সমুদ্রপথে ইউরোপে গিয়ে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে আশ্রয় চাইছে, তাদের বেশিরভাগ আবেদনই এখন দ্রুত নাকচ হয়ে যাবে, কারণ ইউরোপ দেখেছে তাদের দেখানো কারণগুলো প্রায়শই সঠিক নয়।’
শরীফুল হাসান আরও উল্লেখ করেন, আগে আশ্রয় আবেদনের নিষ্পত্তি হতে বছরখানেক সময় লাগতো, যে সময়ে আশ্রয়প্রার্থীরা সংশ্লিষ্ট দেশে থাকার ও কাজ করার সুযোগ পেতেন। নতুন দ্রুত প্রক্রিয়ার ফলে সেই সুযোগ সীমিত হয়ে আসবে। এমনকি অপেক্ষমাণ আবেদনগুলোর ক্ষেত্রেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিরোধিতা ও জটিলতা
বিশ্বজুড়ে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি সহ অনেক দেশই সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ বাড়িয়েছে এবং ভিসা নীতি কঠোর করছে। ইতালির ডানপন্থি সরকার ইইউ’র এই তালিকাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বাংলাদেশ, মিশর ও তিউনিসিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করাকে তাদের সরকারের সাফল্য হিসেবে দেখছেন।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউরোমেড রাইটস সতর্ক করে বলেছে, এই দেশগুলোকে নিরাপদ বলা বিভ্রান্তিকর ও বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এর মধ্যে এমন দেশও রয়েছে যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নাগরিকদের নিরাপত্তা সীমিত।
কমিশনের মুখপাত্র মার্কাস ল্যামার্ট অবশ্য আশ্বস্ত করেছেন যে, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না এবং ইইউ আইন অনুযায়ী প্রতিটি আবেদন পৃথকভাবে মূল্যায়ন করা হবে।
এই নতুন প্রস্তাবগুলো এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ও সদস্য দেশগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিবিসি অবলম্বনে
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.