বৈশ্বিক সংকটের মাঝে বাংলাদেশে বিরল খনিজের সন্ধান: নতুন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
- Details
- by ২৪ ডেস্ক
চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে বিশ্বজুড়ে বিরল মৃত্তিকা খনিজ (Rare Earth Minerals) নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আইফোন নির্মাতা অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট থেকে শুরু করে প্রতিরক্ষা শিল্প পর্যন্ত এই খনিজগুলোর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। চীন এই খনিজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপের ইঙ্গিত দেওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো বিকল্প উৎসের সন্ধান করছে। ঠিক এমন পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশের গবেষকেরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মূল্যবান এই বিরল খনিজের সন্ধান পেয়েছেন, যা দেশের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
ছবি - সংগৃহীত
চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব ও বৈশ্বিক প্রভাব
যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি চীনা পণ্যের ওপর উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করার পর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো যুক্তরাষ্ট্রে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ রপ্তানি বন্ধ বা সীমিত করার হুমকি। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি চুম্বকসহ বিভিন্ন বিরল মৌলের রপ্তানিতে বিশেষ অনুমতির বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে, যার ফলে রপ্তানির অপেক্ষায় থাকা প্রচুর পণ্য বন্দরে আটকা পড়েছে।
এই ১৭টি বিরল মৌল (যার মধ্যে স্ক্যানডিয়াম, ইট্রিয়াম এবং ল্যান্থানাইড সিরিজের ১৫টি মৌল অন্তর্ভুক্ত) আধুনিক প্রযুক্তির প্রাণভোমরা হিসেবে পরিচিত। স্মার্টফোন, কম্পিউটার চিপ, বৈদ্যুতিক গাড়ি থেকে শুরু করে লেজার, রাডার, জেট ইঞ্জিন, মিসাইল সিস্টেম ও স্যাটেলাইটের মতো প্রতিরক্ষা ও মহাকাশ প্রযুক্তিতে এর ব্যবহার অপরিহার্য। চীনের এই পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি শিল্প বড় ধরনের সংকটে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এটি একুশ শতকের ভূ-অর্থনৈতিক যুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক, যেখানে চীনের একাধিপত্য ভাঙতে পশ্চিমা বিশ্ব মরিয়া হয়ে বিকল্প সরবরাহ ব্যবস্থা খুঁজছে।
বিরল খনিজ কী এবং এর গুরুত্ব
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব পিওর অ্যান্ড অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি (আইইউপিএসি) অনুযায়ী, ১৭টি মৌলের একটি গ্রুপকে বিরল খনিজ বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে ল্যান্থানাইড সিরিজের ১৫টি মৌল এবং স্ক্যান্ডিয়াম ও ইট্রিয়াম। আধুনিক প্রযুক্তির প্রায় সব ক্ষেত্রেই, যেমন: মোবাইল ফোন, কম্পিউটার হার্ডড্রাইভ, এলইডি ডিসপ্লে, বৈদ্যুতিক যানবাহন, নবায়নযোগ্য শক্তি (বায়ু টারবাইন, সৌর প্যানেল), চিকিৎসা প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে এগুলো অপরিহার্য। তবে এদের উত্তোলন ও পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল।
বৈশ্বিক মজুত ও উৎপাদন
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) তথ্যমতে, বিশ্বে বিরল খনিজের সবচেয়ে বড় মজুত চীনে (৪ কোটি ৪০ লাখ মেট্রিক টন)। এরপর রয়েছে ব্রাজিল (২ কোটি ১০ লাখ টন), ভারত (৬৯ লাখ টন), অস্ট্রেলিয়া (৫৭ লাখ টন) ও রাশিয়া (৩৮ লাখ টন)। উৎপাদনেও চীন এগিয়ে, ২০২৪ সালে দেশটি ২ লাখ ৭০ হাজার টন উৎপাদন করেছে, যেখানে দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র করেছে মাত্র ৪৫ হাজার টন।
বাংলাদেশে সম্ভাবনা ও প্রাপ্তি
বাংলাদেশে আলাদাভাবে বিরল খনিজ অনুসন্ধানের সরকারি উদ্যোগ না থাকলেও ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) গবেষকেরা প্রায় ২০ বছর ধরে খনিজ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে এর সন্ধান পেয়েছেন।
জিএসবির গবেষকদের মতে, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও ময়মনসিংহের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে আসা পলি, নদী অববাহিকার বালু, জেগে উঠা চর, সৈকত বালু এবং দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকায় বিরল খনিজ পাওয়া গেছে।
যমুনা নদী: গাইবান্ধার যমুনা নদীর বালুতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বিরল মৃত্তিকা মৌলের পাশাপাশি লিথিয়াম, ইউরেনিয়াম ও থোরিয়ামের সন্ধান মিলেছে। গত বছর অস্ট্রেলীয় কোম্পানি এভারলাস্ট মিনারেলস এখান থেকে বাণিজ্যিকভাবে ভারী খনিজ সংগ্রহ শুরু করেছে।
ধরলা নদী: এই নদীর বালুতে থাকা মোনাজাইট ও জিরকন খনিজের সঙ্গে স্যামারিয়াম, গ্যাডোলিনিয়াম, টারবিয়াম ও ডিসপ্রোসিয়ামের মতো বিরল মৌলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে (প্রতি কেজিতে ৬০-১৭৬ মিলিগ্রাম)।
বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি: এখানকার কয়লায় প্রতি কেজিতে ২০০ মিলিগ্রামের বেশি এবং কয়লা পোড়া ছাইয়ে প্রতি কেজিতে ৭০০-৮০০ মিলিগ্রাম বিরল খনিজের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্যতার আন্তর্জাতিক মাত্রার (কয়লায় ১০০ মিলিগ্রাম, ছাইয়ে ৬০০ মিলিগ্রাম) চেয়ে বেশি।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ
জিএসবির গবেষকেরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর নদীগুলো প্রায় ১ বিলিয়ন টন পলি বহন করে আনে, যা বিরল খনিজ আহরণের বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করে। তবে, এই খনিজ বাণিজ্যিকভাবে কতটা লাভজনক হবে, তা নিশ্চিত হতে আরও বিশদ গবেষণা ও বিশ্লেষণের প্রয়োজন। এর জন্য প্রয়োজন উন্নত পরীক্ষাগার সুবিধা এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। যদি এই খনিজ সম্পদ সঠিকভাবে আহরণ ও ব্যবহার করা যায়, তবে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং বৈশ্বিক সরবরাহ সংকটে একটি বিকল্প হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।
প্রথম আলো অবলম্বনে
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.