সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জায়ান্ট মেটার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক অ্যান্টিট্রাস্ট মামলার বিচার সোমবার ওয়াশিংটনে শুরু হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতা ও ভোক্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা (এফটিসি) অভিযোগ করেছে যে, ফেসবুকের মালিক মেটা মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দূর করার জন্যই ২০১২ সালে ইনস্টাগ্রাম এবং ২০১৪ সালে হোয়াটসঅ্যাপ কিনে নেয়, যার ফলে কার্যকরভাবে একটি একচেটিয়া বাজার তৈরি হয়।

mark zuckerberg 2মার্ক জাকারবার্গ

ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) পূর্বে এই অধিগ্রহণগুলো পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিলেও এর ফলাফল পর্যবেক্ষণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদি এফটিসি এই মামলায় জয়ী হয়, তবে তারা মেটার সিইও মার্ক জাকারবার্গকে ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ উভয়ই বিক্রি করে দিতে বাধ্য করতে পারে।

মেটা এর আগে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা বিবিসিকে বলেছেন, মেটা সম্ভবত যুক্তি দেবে যে ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণের পর ব্যবহারকারীরা আরও ভালো অভিজ্ঞতা পেয়েছেন।

ভ্যান্ডারবিল্ট ল' স্কুলের অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের অধ্যাপক রেবেকা হ অ্যালেন্সওয়ার্থ বলেন, ‘এফটিসি'র যুক্তি হলো, ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণ ছিল ফেসবুকের জন্য ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক হুমকিকে নিষ্ক্রিয় করার একটি উপায়।’ তিনি আরও বলেন, জাকারবার্গের নিজের কথা, বিশেষ করে তার ই-মেইলগুলো, শুনানিতে সবচেয়ে জোরালো প্রমাণ হিসেবে হাজির হতে পারে।

মিস অ্যালেন্সওয়ার্থ বলেন, ‘তিনি (জাকারবার্গ) বলেছিলেন, প্রতিযোগিতা করার চেয়ে কিনে নেওয়া ভালো। এর চেয়ে সরাসরি কথা আর কী হতে পারে!’ অন্যদিকে, মেটা সম্ভবত যুক্তি দেবে যে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় উদ্দেশ্য ততটা প্রাসঙ্গিক নয়। তিনি বলেন, ‘তারা বলবে আসল প্রশ্ন হলো: এই একীভূতকরণের ফলে ভোক্তারা কি লাভবান হয়েছেন? তারা প্রমাণ হাজির করবে যে, ফেসবুকের মালিকানায় থাকার সুবিধা পেয়েই ইনস্টাগ্রাম আজকের অবস্থানে এসেছে।’

জাকারবার্গ এবং কোম্পানির সাবেক চিফ অপারেটিং অফিসার শেরিল স্যান্ডবার্গ উভয়েরই এই বিচারে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা রয়েছে, যা কয়েক সপ্তাহ ধরে চলতে পারে।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি

এই মামলাটি (এফটিসি বনাম মেটা) যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দায়ের করা হলেও, তার সম্ভাব্য দ্বিতীয় মেয়াদে এটি রাজনৈতিক রূপ নেওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতে, জাকারবার্গ ব্যক্তিগতভাবে ট্রাম্পকে মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য তদবির করেছেন।

বিবিসি এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করতে চাইলে মেটা প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়ে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘মেটার বিরুদ্ধে এফটিসি’র মামলা বাস্তবতা বিবর্জিত।’

মেটার একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘এফটিসি আমাদের অধিগ্রহণগুলো পর্যালোচনা ও ছাড়পত্র দেওয়ার ১০ বছরেরও বেশি সময় পর কমিশনের এই পদক্ষেপ বার্তা দেয় যে, কোনো চুক্তিই আসলে চূড়ান্ত নয়।’

২০২১ সালের জানুয়ারিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার পর ট্রাম্পকে মেটার প্ল্যাটফর্ম থেকে নিষিদ্ধ করায় জাকারবার্গ ও ট্রাম্পের সম্পর্ক শীতল ছিল। তবে এরপর সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মেটা ট্রাম্পের অভিষেক তহবিলে ১ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে এবং জানুয়ারিতে ঘোষণা করেছে যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র, ইউএফসি বস ডানা হোয়াইট তাদের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেবেন। জানুয়ারিতে কোম্পানিটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকারদের বাদ দেওয়ার ঘোষণাও দেয়।

‘একটি অত্যন্ত স্পষ্ট বার্তা’

মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক দুইজন এফটিসি কমিশনারকে বরখাস্ত করার বিষয়টিও এই মামলার ওপর ছায়া ফেলেছে। ডেমোক্র্যাট হিসেবে রেবেকা কেলি স্লটার এবং আলভারো বেদোয়া পাঁচ সদস্যের কমিশনে সংখ্যালঘু ছিলেন। বুধবার পর্যন্ত কমিশনের মাত্র দুটি আসন পূরণ ছিল, দুটিই রিপাবলিকানদের দখলে। বৃহস্পতিবার সেনেট আরও একজন রিপাবলিকানকে নিশ্চিত করেছে।

স্লটার এবং বেদোয়া - যারা পুনর্বহালের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করছেন - বলেছেন, তাদের সরিয়ে দেওয়ার পদক্ষেপটি ছিল ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে। স্লটার সম্প্রতি বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট শুধু আমাদেরকেই নয়, চেয়ারম্যান ফার্গুসন এবং কমিশনার (মেলিসা) হোলিওককেও একটি অত্যন্ত স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছেন যে, তারা যদি তার অপছন্দের কিছু করেন, তবে তিনিও তাদের বরখাস্ত করতে পারেন।’

স্লটার আরও বলেন, ‘সুতরাং তারা যদি তার রাজনৈতিক মিত্রদের পক্ষে কোনো সুবিধা দিতে না চান, তবে তারাও বরখাস্তের ঝুঁকিতে রয়েছেন।’

স্লটার এবং বেদোয়া দুজনেই জাকারবার্গের তদবির প্রচেষ্টা সম্পর্কে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মি. বেদোয়া বিবিসিকে বলেন, ‘আমার আশা, কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হবে না।’

বিবিসি মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করলেও এফটিসি সাড়া দেয়নি।

ট্রাম্প কর্তৃক নিযুক্ত এফটিসি চেয়ারম্যান ফার্গুসন সম্প্রতি ‘দ্য ভার্জ’কে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যদি তাকে মেটার মতো কোনো মামলা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দেন, তবে তিনি ‘আইনসঙ্গত আদেশ মেনে চলবেন’। ফার্গুসন অবশ্য যোগ করেছেন যে, এমন কিছু ঘটলে তিনি খুব অবাক হবেন।

এফটিসিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিট্রাস্ট পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এটি জালিয়াতির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের কয়েক মিলিয়ন ডলার ফেরত দিয়েছে, পাশাপাশি জাঙ্ক ফি এবং সাবস্ক্রিপশন ফাঁদ নিষিদ্ধ করার আইন পাস করেছে। কিন্তু মেটার বিচার শুরু হওয়ার সময়ে, এটি সেই অনেক স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে একটি, যেগুলোকে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণে আনতে আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। চেয়ারম্যান ফার্গুসন সম্প্রতি স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ‘গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়’ বলে তার বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

এফটিসি’র ‘কঠিন লড়াই’

এফটিসি বনাম মেটা মামলাটি এমন সময়ে শুরু হচ্ছে যখন আরেকটি বড় অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা - ইউএসএ বনাম গুগল - প্রতিকার পর্বে প্রবেশ করছে। বিচার বিভাগের প্রথম ধাপের জয় হয়েছিল গত গ্রীষ্মে, যখন বিচারক অমিত মেহতা খুঁজে পান যে গুগল অনলাইন সার্চে একচেটিয়া আধিপত্য ধরে রেখেছে, যার বাজার অংশীদারিত্ব প্রায় ৯০%। গত মাসে, বিচার বিভাগ বাইডেন প্রশাসনের সময় করা দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে যে আদালত যেন গুগলের সার্চ একচেটিয়া ভেঙে দেয়।

জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ল’র সহযোগী অধ্যাপক লরা ফিলিপস-সয়ার বলেন, মেটার বিরুদ্ধে এফটিসি’র মামলা প্রমাণ করা আরও কঠিন হবে। তিনি এফটিসি সম্পর্কে বলেন, ‘আমি মনে করি তাদের একটি কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ইনস্টাগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপ হস্তান্তরের কোনো বিবেচনা আসার আগে তাদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।’

এর কারণ হলো, অনলাইন সার্চের তুলনায়, মেটা যে ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক পরিষেবা ক্ষেত্রে কাজ করে, সেখানে প্রতিযোগিতা বেশি, মিস ফিলিপস-সয়ার বলেন।

মেটা এক বিবৃতিতে বলেছে, বিচারের প্রমাণ ‘দেখিয়ে দেবে যা বিশ্বের প্রত্যেক ১৭ বছর বয়সী জানে, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপ চীনা মালিকানাধীন টিকটক, ইউটিউব, এক্স, আইমেসেজ এবং আরও অনেকের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে।’

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.