বিনিয়োগ আকর্ষণে সরকারের নতুন নীতি: নেপালের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৮ সংস্থা এক ছাতার নিচে, ১০টি বাতিল

বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে একগুচ্ছ নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নেপালের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) স্থাপন, বিনিয়োগ সংক্রান্ত ৮টি সংস্থাকে একক প্ল্যাটফর্মে আনা এবং পূর্ববর্তী সরকারের অনুমোদিত ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিল করা।

বক্তব্য রাখছেন আশিক চৌধুরী মাহমুদ বিন হারুন

রোববার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’ এর অর্জন বিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী মাহমুদ বিন হারুন এসব তথ্য জানান। এই পদক্ষেপগুলো প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশনায় নেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

বিডা চেয়ারম্যান জানান, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নেপালের জন্য একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার কথা বলেছেন। পাশাপাশি, বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করতে বেজা ও বিডা-সহ ৮টি সংস্থাকে একই ছাতার নিচে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর বেজা ও বিডার গভর্নিং বোর্ডের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) আরও কার্যকর করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। যেসব সংস্থার ওএসএস অনলাইন এবং ম্যানুয়াল উভয় পদ্ধতিতেই চালু আছে, তাদের আগামী এক মাসের মধ্যে ম্যানুয়াল পদ্ধতি বন্ধ করে সম্পূর্ণ অনলাইনে রূপান্তরিত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সকল ওএসএস সেবাকে একত্রিত করে একটি একক (সিঙ্গেল) পোর্টাল তৈরির কাজও শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এছাড়াও, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (ফ্রি ট্রেড জোন) গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এই অঞ্চলের সুবিধা যাতে প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভুটান এবং এমনকি চীনও পায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

সংবাদ সম্মেলনে বিডা চেয়ারম্যান আরও জানান, পূর্ববর্তী সরকারের আমলে অনুমোদিত ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয়তা ও অপরিকল্পিত অনুমোদনের কারণে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বাতিলকৃত অঞ্চলগুলো হলো: সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্ক, সুন্দরবন ট্যুরিজম পার্ক (বাগেরহাট), গজারিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল (মুন্সিগঞ্জ), শ্রীপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল (গাজীপুর), ময়মনসিংহ অর্থনৈতিক অঞ্চল, গার্মেন্টস শিল্প পার্ক (মুন্সিগঞ্জ), ছাতক ইকোনমিক জোন (সুনামগঞ্জ), ফমকম ইকোনমিক জোন (বাগেরহাট), সিটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন (ঢাকা) এবং সোনারগাঁও অর্থনৈতিক অঞ্চল (নারায়ণগঞ্জ)।

ভবিষ্যতে যেকোনো অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের পূর্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে এবং সংশ্লিষ্ট সকল ইউটিলিটি সংস্থার (গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি) প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ভারত কর্তৃক ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল হওয়া বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর যেমন সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যা আগে সড়কপথে কলকাতা বা দিল্লি হয়ে রপ্তানিতে ব্যবহৃত হতো।

বৈঠকে বাংলাদেশি নাগরিক যারা বিদেশে থেকে বিনিয়োগ আনবেন, তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যায় কিনা, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান রচি এবং প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

বাসস অবলম্বনে