৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চায় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান, লক্ষ্য পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সহায়তা করতে ৫০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আহসান এইচ মনসুর

গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের লন্ডন সফরকালে এ আগ্রহ প্রকাশ পায়। অবৈধভাবে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের চলমান প্রচেষ্টাকে সমর্থন করাই ছিল এ সফরের মূল উদ্দেশ্য। সম্পদ উদ্ধার টাস্কফোর্সের প্রধান মনসুর ১৭ থেকে ২১ মার্চ লন্ডনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে বৈঠক করেন। যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের অন্যতম গন্তব্যস্থল বলে ধারণা করা হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ১৬ বছরে আত্মসাৎ হওয়া অর্থ, যার বেশিরভাগ অবৈধভাবে বিদেশে স্থানান্তরিত হয়েছে, তা উদ্ধার করা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।’ ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার ছিল এই অর্থ পাচারের প্রধান উৎস বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আল জাজিরার এক সাক্ষাৎকারে মনসুর জানান, ১১টি প্রভাবশালী পরিবারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ রয়েছে। এই অর্থের সন্ধানে বাংলাদেশ ব্যাংক ১১টি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, তদন্তাধীন একটি পরিবারই প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। একটি ব্যাংকের প্রায় ৯০ শতাংশ আমানত তুলে নেওয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটি পতনের ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

মনসুর জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এই অর্থ উদ্ধারের জন্য যুক্তরাজ্যকে প্রাথমিক কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

১৯ মার্চ লন্ডনে এক সেমিনারে মনসুর ঘোষণা করেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া এপ্রিলের শেষে প্রকাশ করা হবে। এই সেমিনারে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান এবং আইনজীবী, ফরেনসিক তদন্তকারী সহ প্রায় ১০০ জন অংশগ্রহণ করেন। এই উদ্যোগটি বিশ্বব্যাংকের চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধার কর্মসূচি এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারির কারিগরি সহায়তা পাবে।

বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম মামলা অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করে সম্পদ উদ্ধারে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিলেও মামলা চালানোর জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণের ভিত্তিতেই এই বিনিয়োগ নির্ভর করবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। মনসুর তাদেরকে সম্ভাব্য মামলা পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

লন্ডন সফরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দুর্নীতি বিষয়ক সর্বদলীয় সংসদীয় গোষ্ঠীর সদস্য এবং যুক্তরাজ্যের বিদেশ, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়ন অফিসের এশিয়া বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্টের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্তিশালী করতে এবং চলমান ব্যাংকিং সংস্কারে যুক্তরাজ্যের সমর্থনের জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

‘চুরি হওয়া সম্পদ উদ্ধার করা বাংলাদেশ এবং যেসব দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে, উভয়ের জন্য নৈতিক, রাজনৈতিক এবং আর্থিক দিক থেকে অপরিহার্য,’ বিবৃতিতে বলা হয়।

বেশ কয়েকটি ব্রিটিশ বেসরকারি সংস্থা যুক্তরাজ্য সরকারকে বাংলাদেশের অর্থ উদ্ধার প্রচেষ্টায় সমর্থন বৃদ্ধি এবং অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে বর্তমানে একটি নতুন সম্পদ উদ্ধার আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হচ্ছে বলেও মনসুর জানান।