‘বিশ্বকে বদলে দেওয়ার দুর্দান্ত আইডিয়া আছে বাংলাদেশের’

বিশ্বকে বদলে দেওয়ার মতো দুর্দান্ত সব আইডিয়া আছে বাংলাদেশের কাছে। দুনিয়া বদলাতে চাইলে ব্যবসা সবচেয়ে শক্তিশালী কাঠামো। আর বাংলাদেশে ব্যবসার ভালো সুযোগ রয়েছে।– কথাগুলো বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিনিয়োগ সম্মেলনে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আজ বুধবার (৯ এপ্রিল) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশ বিনিয়োগ বোর্ডের (বিডা) আয়োজনে ৭ এপ্রিল বিনিয়োগ সম্মেলন শুরু হলেও আজ আনুষ্ঠানিকভাবে তা উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা।

বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ব্যবসার ভালো সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশে। এ ব্যবসা শুধু বাংলাদেশের জন্যই নয়, সারা বিশ্বের জন্য সুযোগ তৈরি করতে পারে। যেমন, একসময় ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে শুরু হলেও এখন তা আমেরিকার সবচেয়ে বড় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।

বিশ্বকে বদলাতে চাইলে ব্যবসা সবচেয়ে শক্তিশালী কাঠামো বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, সবাই মিলে উপার্জন করে মানুষের ভাগ্য পাল্টে দেওয়াটা একটি স্বর্গীয় অনুভূতি। কার্বন নিঃসরণ বাদ দিয়েও আমরা নতুন সভ্যতা গড়তে পারি। কেননা, বর্তমান সভ্যতা আত্মবিধ্বংসী।

ড. ইউনূস আরও বলেন, নতুন বিশ্ব গড়তে এখন থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশে ব্যবসা করা শুধু এ দেশেই বিনিয়োগ নয়, বরং এর অর্থ বিশ্বব্যাপী সামাজিক ব্যবসার অংশ হওয়া।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নতির ফ্রেমওয়ার্ক তৈরির মাধ্যমেই সম্ভব দারিদ্র্য বিমোচন। আর সামাজিক ব্যবসার আদর্শ স্থান বাংলাদেশ।

বক্তব্যের একপর্যায়ে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধান উপদেষ্টা।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৭১ সালে লাখো প্রাণ ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন দেশের সূচনা হয়। এখন বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৮ কোটি, তখন ছিল এর তিন ভাগের একভাগ। এরপর আসে ১৯৭৪।

একথা বলেই আবেগপ্লুত হয়ে কিছুটা সময়ের জন্য চুপ হয়ে যান প্রধান উপদেষ্টা। এরপর চোখ ছলছল অবস্থায় তিনি বলেন, ক্ষুধায় অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। আমাদের দেশের অনেক বড় একটা দুর্ভিক্ষ ছিল। ১৫ লাখ মানুষ মারা গেছে। তখন এমন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ।

ড. ইউনূস বলেন, আমরা বছরে একটিই ফসল ফলাতাম তখন। আমাদের অন্য কোনো উপায়ও জানা ছিল না। আমাদের দেশের মানুষ কৃষক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। কারণ আর কোনো পেশা ছিল না। আর কৃষকদের মধ্যে তিন চতুর্থাংশের নিজের কোনো জমিজমাও ছিল না। সেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বকে বদলে দেওয়ার জন্য ক্রেজি আইডিয়ার দেশ...বাংলাদেশ সেটি সম্ভব করেও দেখিয়েছে।

বিনিয়োগে অবদানে পুরস্কার প্রদান:

বিনিয়োগে অবদান রাখায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করলেন প্রধান উপদেষ্টা। সম্মেলনের তৃতীয় দিনে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা এই পুরস্কার তুলে দেন। পুরস্কৃত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ওয়ালটন (দেশি বিনিয়োগকারী), বিকাশ (বিদেশি বিনিয়োগকারী), স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস ও ফেব্রিকস লাগবে। বিশেষ ক্যাটাগরিতে কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের চেয়ারম্যানকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দেওয়া হয়।