ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ: চীনা পণ্যে ১০৪ শতাংশ, আর কোন দেশে কত!

বিশ্বজুড়ে শুল্কযুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক চীনের পণ্যেই শুল্ক বসিয়ে দিয়েছেন ১০৪ শতাংশ। চীনও ছেড়ে দেয়নি। তারাও পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। শুধু চীনই নয়, বিশ্বের অন্তত ১০০টি দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র, যাকে তারা বলছে, রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ।

ট্রাম্পের দাবি, রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পদশালী করবে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল চীন, কানাডা, মেক্সিকো, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশসহ পুরো বিশ্বের ওপরই একগুচ্ছ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তার যুক্তি, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে। তবে আর যাই হোক, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে শুল্কযুদ্ধ।

চীনের পণ্যের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক:

হোয়াইট হাউস মঙ্গলবার ঘোষণা করেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন না। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, আজ (মঙ্গলবার) রাত ১২টা থেকে চীনের ওপর ১০৪ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে।

চীনের পণ্যে দুই সপ্তাহ আগেও শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। গত সপ্তাহে ২০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ কর আরোপ করেন ট্রাম্প। এর জবাবে চীন পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিলে তাতে আরও ক্ষেপে যান ট্রাম্প। এরপর মঙ্গলবার বিদ্যমান ৫৪ শতাংশ শুল্কের ওপর আরও ৫০ শতাংশ ঘোষণা করে ট্রাম্প প্রশাসন। এর মানে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা চীনা পণ্যের উপর মোট শুল্ক হবে ১০৪ শতাংশ।

বাংলাদেশও রয়েছে ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের তালিকায়

১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক:

৫ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় সমস্ত বিদেশী আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। যেসব কোম্পানি বিদেশী পণ্য আমেরিকায় আনবে, তাদের মার্কিন সরকারকে এই কর দিতে হবে।

কিছু দেশ কেবল বেসলাইন হারের মুখোমুখি হবে। এর মধ্যে রয়েছে: যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, তুরস্ক, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, এল সালভাদর, আরব আমিরাত ও সৌদি আরব।

৬০ দেশের ওপর বিভিন্ন হারে অতিরিক্ত শুল্ক:

আজ ৯ এপ্রিল (বুধবার) থেকে আরো প্রায় ৬০টি দেশের ওপর উচ্চতর শুল্ক আরোপ কার্যকর করছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের অভিযোগ, এই দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিল।

হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা বলেছেন, ৬০টি দেশ ‘সবচেয়ে খারাপ অপরাধী’ যারা এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর উচ্চ মাত্রায় শুল্ক আরোপ করেছে, মার্কিন বাণিজ্যে ‘অ-শুল্ক’ বাধা আরোপ করেছে অথবা এমনভাবে কাজ করেছে যা আমেরিকান অর্থনৈতিক লক্ষ্যকে দুর্বল করেছে।

৬০টি দেশের পণ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন হারে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যে ৪৬ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৩৬ শতাংশ, জাপানে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৪৯, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩০ শতাংশ, তাইওয়ানে ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এছাড়া ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৫ শতাংশ, মালয়েশিয়ায় ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ৪৯ শতাংশ, ভারতীয় পণ্যে ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের ২৯ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ১০ শতাংশ, নেপালে ১০ শতাংশ, ফিলিপাইনে ১৭ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৪৪ শতাংশ, মিয়ানমারে ৪৪ শতাংশ ও লাওসে ৪৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ:

মার্কিন শুল্কারোপের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশি পণ্যের ওপরে ৩৭ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আগে যুক্তরাষ্ট্রের গড় শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ। নতুন অতিরিক্ত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত চেয়ে এরইমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে দুটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠির জবাব এখনও পায়নি বাংলাদেশ।

শুল্ক আরোপ থেকে পিছু হটবেন না ট্রাম্প:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এরইমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, নতুন শুল্ক আরোপ কার্যকর থেকে পিছু হটবেন না তিনি। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলা, আমেরিকান কর্মসংস্থান এবং উৎপাদন রক্ষার জন্য এগুলো প্রয়োজনীয়।

তবে ট্রাম্প নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আরোপিত এই নতুন আমদানি কর, এই সপ্তাহে বিশ্বব্যাপী বাজারে ধাক্কা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি ভঙ্গুর হয়ে পড়বে এই শুল্কযুদ্ধে।