বিমসটেক সদস্যদের পারস্পরিক স্বার্থে কাজ করার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার

বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলির আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের (বিমসটেক) ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সদস্য দেশগুলোকে পারস্পরিক স্বার্থ ও সবার কল্যাণে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

ছবি - সংগৃহীত

শুক্রবার ব্যাংককে সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত আঞ্চলিকতাবাদের ধারণায় বিশ্বাসী এবং এমন একটি অঞ্চল কামনা করে যেখানে সকল দেশ ও জনগোষ্ঠী ন্যায্যতা, সম্মান ও পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে কাজ করতে পারবে।

বিমসটেক অঞ্চলে বিশ্ব জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ বসবাস করে এবং বহু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। এই চ্যালেঞ্জগুলোকে সুযোগে রূপান্তর করার মাধ্যমে সকলের জন্য উন্নয়নের সম্ভাবনা রয়েছে। জনসংখ্যাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে না দেখে এর অপূর্ণ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ওপর তিনি জোর দেন।

বিমসটেক সচিবালয়ের আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ এই জোটের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।

অধ্যাপক ইউনূস জ্বালানি নিরাপত্তার গুরুত্ব তুলে ধরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুৎ বাণিজ্য এবং জ্বালানি দক্ষতার ওপর জোর দেন। তিনি ‘বিমসটেক গ্রিড ইন্টারকানেকশন চুক্তি’ (২০১৮)-কে জ্বালানি সহযোগিতার সূচনা হিসেবে অভিহিত করেন।

তিনি বিমসটেকের অঙ্গীকার অনুযায়ী কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রসার এবং তরুণদের আন্তঃসীমান্ত চলাচল সহজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বর্তমানে আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য মাত্র ৫.৯ শতাংশ। 'বিমসটেক এফটিএ চুক্তি' (২০০৪) বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাণিজ্য বৃদ্ধির আহ্বান জানান তিনি।

‘পরিবহন কানেক্টিভিটি মাস্টার প্ল্যান’ (২০১৮)-এর সময়োচিত বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরে এই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। 'বিমসটেক সামুদ্রিক পরিবহন সহযোগিতা চুক্তি' ভূমিবেষ্টিত দেশগুলির সাথে যোগাযোগ সহজ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিমসটেকের ২৮ বছর পূর্তি হলেও এর প্রভাব এখনো স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়নি বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। বিমসটেককে পুনরুজ্জীবিত করতে সকল সদস্য দেশের সহযোগিতা কামনা করেন। মতবিরোধের ঊর্ধ্বে উঠে পারস্পরিক আস্থা ও স্বার্থে সত্যিকার অর্থে সমৃদ্ধি ভাগাভাগির আহ্বান জানান তিনি।

বিমসটেকের অধীনে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার কৌশল ও প্রতিষ্ঠানগুলোর পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে আয় বৈষম্য, পছন্দের বৈষম্য দূরীকরণ এবং অর্থনীতি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার ওপর জোর দেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রেক্ষাপটে অনেক পুরনো নীতি ও নিয়ম ভেঙে পড়ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুগোপযোগী করতে আর্থিক ব্যবস্থার সংস্কার এবং সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যা মোকাবেলায় বিদ্যমান সম্পদ ও সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

সূত্র: বাসস