ড. ইউনূস: জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানই এখন সরকারের প্রধান এজেন্ডা

জাতীয় নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব অনুষ্ঠান করাই বর্তমান সরকারের প্রধান এজেন্ডা বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমস্টেক শীর্ষ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় তিনি এ কথা বলেন।

ছবি - সংগৃহীত

তিনি বলেন, ‘আমি আমাদের জনগণকে আশ্বস্ত করেছি যে, নির্বাচন পরিচালনা এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর, আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত করব।’

জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে নয় মাসব্যাপী গণহত্যার সময় লাখ লাখ নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর বর্বর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছিল।

‘আমাদের জনগণ একটি সমতাভিত্তিক, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীন সমাজের আকাঙ্ক্ষা করে যেখানে প্রতিটি সাধারণ মানুষ তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।’

‘দুঃখজনকভাবে, গত পনেরো বছরে, আমাদের জনগণ, বিশেষ করে তরুণরা, ক্রমশ তাদের সুযোগ-সুবিধা এবং অধিকার খর্ব হতে দেখেছে। তারা প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের গভীর ক্ষয় এবং নাগরিক অধিকার লঙ্ঘিত হতে দেখেছে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সাধারণ জনতা প্রায় দুই হাজার নিরীহ মানুষ, যাদের বেশিরভাগই তরুণ, যাদের মধ্যে ১১৮ জন শিশু রয়েছে, তাদের জীবনের বিনিময়ে নিষ্ঠুর স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ তার ইতিহাসে একটি পুনর্জন্ম প্রত্যক্ষ করেছে।’

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বৈরাচারী শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতারা দেশের ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে তাকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলেন।

‘আমি আমাদের জনগণের জন্য দায়িত্ব নিতে সম্মত হয়েছি,’ তিনি যোগ করেন।

তিনি বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের জন্য শক্তিশালী এবং সুদূরপ্রসারী সংস্কার গ্রহণের অঙ্গীকার করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে।

‘আমরা সুশাসন, দুর্নীতি দমন এবং অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা যে সংস্কারের পরিকল্পনা করেছি তার মূল বিষয়গুলো এগুলো।’

জনগণের অংশগ্রহণ, জবাবদিহিতা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, পুলিশ, দুর্নীতি দমন ব্যুরো এবং সংবিধান সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

কমিশনগুলো ইতিমধ্যে তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে, যা সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

‘আমরা ছয়টি কমিশনের প্রধানদের নিয়ে আমার নেতৃত্বে সাত সদস্যের ‘জাতীয় ঐক্যমত কমিশন’ গঠন করেছি, যা প্রতিটি কমিশনের জমা দেওয়া সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণ করবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য, শ্রম ও নারীর অধিকার বিষয়ে নীতিগত সুপারিশ করার জন্য আরও চারটি কমিশন গঠন করেছে।

‘আমরা যখন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করব, তখন আমরা দেশের প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য অবিচলভাবে কাজ করে যাব, তারা নারী হোক বা জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সদস্য হোক।’

এ উপলক্ষে থাই প্রধানমন্ত্রী এবং শীর্ষ সম্মেলনের চেয়ারপারসন পেটংটার্ন শিনাওয়াত্রা, বিমস্টেকের মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ইন্দ্র মনি পাণ্ডে এবং বিমস্টেক সদস্য রাষ্ট্রের বিশিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।