রমজানের বরকতে সৌদি আরবে দানের ঢল

রমজান মাসে সৌদি আরবজুড়ে দান-খয়রাত ও সহায়তার এক ঢল নেমে এসেছে। মুসলমানদের পবিত্র এই মাসে বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠান অসহায়দের পাশে দাঁড়িয়েছে। অসুস্থদের চিকিৎসা, এতিমদের শিক্ষা এবং পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করার জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

ছবি - সংগৃহীত

এই মহৎ কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সৌদি সরকার কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। স্টেট সিকিউরিটি প্রেসিডেন্সি জানিয়েছে, সব ধরনের দান অবশ্যই সরকারিভাবে অনুমোদিত চ্যানেলের মাধ্যমেই করতে হবে। আন্তর্জাতিক দানের ক্ষেত্রে কিং সালমান হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যান্ড রিলিফ সেন্টার একমাত্র অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান।

রিয়াদ-ভিত্তিক চ্যারিটেবল সোসাইটি ফর অরফান্স কেয়ার (এনসান) এতিমদের কল্যাণে নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান। এনসানের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আল-মুহারিব বলেন, ‘রমজান বরকতময় মাস। এ মাসে দান-খয়রাত বৃদ্ধি পায়।’ তিনি জানান, ঈদের উপহারের মাধ্যমে এতিম শিশুদের আনন্দ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এনসান।

শুধু খাবার বিতরণের পরিবর্তে, এনসান সরাসরি আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। পরিবারগুলোর অ্যাকাউন্টে রমজানের জন্য অর্থ জমা করা হচ্ছে। আল-মুহারিব এ পদ্ধতিকে আধুনিক ও সম্মানজনক বলে বর্ণনা করেছেন।

স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা এনসানের বছরব্যাপী কার্যক্রমের মূল বিষয় হলেও রমজানে এসব ক্ষেত্রে আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আল-মুহারিব বলেন, সামাজিক সংহতির বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনে সৌদি আরবের এই উদ্যোগ নির্ভরশীলতার চক্র ভাঙতে সাহায্য করবে।

ঈদের উপহার এবং ইফতারের মতো সময়সীমাবদ্ধ প্রকল্পের জন্য দ্রুত দানের আহ্বান জানিয়েছেন আল-মুহারিব। এনসানের অফিসিয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে দান করার জন্য তিনি অনুরোধ করেছেন।

১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত জেদ্দার আল-বীর সোসাইটি পরিবার, এতিম এবং কিডনি রোগীদের জন্য সামাজিক সেবা প্রদান করে। ১৭ মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত, ৭০টিরও বেশি মেশিন ব্যবহার করে ৬,৬০,০০০-এরও বেশি ডায়ালাইসিস সেশন পরিচালনা করেছে হিশাম আত্তার ও আবদুল করিম বকর মেডিকেল সেন্টার। এছাড়াও রোগীদের জন্য মানসিক, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

সোসাইটি ৩৭,০০০-এরও বেশি পরিবারকে পুনর্বাসন, চাকরির প্রশিক্ষণ এবং প্রকল্পের অর্থায়নের মাধ্যমে সহায়তা করছে। এছাড়াও, ১৪,০০০ এতিমকে তাদের পরিবারের মধ্যে এবং ১,১০০ এতিমকে আবাসিক সুবিধায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং বিনোদনমূলক সহায়তা প্রদান করছে।

৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে আসা কাতিফ চ্যারিটি বর্তমানে ১,৩০০ শিক্ষার্থীকে সহায়তা করছে, যার মধ্যে ২০১ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ বছর ২২ জন শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছে। কাতিফ চ্যারিটি ৩৭০টি পরিবার এবং ৫০০ এতিমকে সহায়তা করেছে এবং ৭০টিরও বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

কাতিফ চ্যারিটির সভাপতি ওসামা আল-জায়ের বলেন, `রমজানের আগেই আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয়।' কাতিফ চ্যারিটি সকল সুবিধাভোগীদের মধ্যে রমজানের খাবারের ঝুড়ি বিতরণ করে। এছাড়াও শুক্রবারের দান, লাইলাতুল কদরের দান এবং যাকাত আল-ফিতরের মতো বিভিন্ন দাতব্য কর্মসূচি পালন করে।

আল-জায়ের বলেন, `এসব কর্মসূচির মাধ্যমে দান নিশ্চিতভাবে অভাবীদের কাছে পৌঁছায়।' এই দান শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন এবং অবকাঠামো উন্নয়নের মতো কর্মসূচিতে ব্যবহৃত হয়।

দান সহজ করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি একটি অনলাইন দান প্ল্যাটফর্ম চালু করেছে।

দক্ষিণ অঞ্চল আসিরে, আজাউইদ নামে একটি উদ্যোগ রোগীদের বাড়িতে স্বাস্থ্যসেবা, টিকাদান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ সরবরাহ করেছে।