রাজনৈতিক দলগুলো আগামী অর্থবছর থেকে করের আওতায় আসতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। করের ক্ষেত্রে সমতা আনার জন্য সরকার বিচারক, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের কিছু কর সুবিধাও বাতিল করার চিন্তাভাবনা করছে।

logo national board of revenue bangladesh nbrজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লোগো

এনবিআরের টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, আসন্ন জাতীয় বাজেটে এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। কমিটি চলতি মাসের শুরুতে রাজনৈতিক দলগুলোকে করের আওতায় আনার সুপারিশ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, “টাস্কফোর্স বেশ কিছু বিদ্যমান কর অব্যাহতি বাতিল করার সুপারিশ করেছে। তাদের সুপারিশের একটি বড় অংশ আগামী বাজেটে বাস্তবায়িত হতে পারে। এর অংশ হিসেবে, রাজনৈতিক দলগুলোর কর অব্যাহতি প্রত্যাহারের পরিকল্পনা রয়েছে।”

তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আর্থিক উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টা গ্রহণ করবেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

টাস্কফোর্সের সুপারিশে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের আয়ের ওপর বিনাশর্তে অব্যাহতি জবাবদিহিতা নষ্ট করে, অর্থ পাচার, কালো টাকা বৈধকরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগকে উস্কে দেয়।

বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, বহু বছর ধরে রাজনৈতিক দলের আয়-ব্যয়ের হিসাব অস্বচ্ছ। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হিসাবের সঙ্গে বাস্তবতার খুব একটা মিল নেই।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “রাজনৈতিক দলের আয়ের উপর কর আরোপ করা যুক্তিসঙ্গত। তাদের আয়, ব্যয় এবং উৎসের সঠিক হিসাব রাখার একটি ব্যবস্থাও থাকা উচিত।”

তিনি বলেন, “তাদের হিসাব অস্বচ্ছ। তারা নামমাত্র বার্ষিক নিরীক্ষিত প্রতিবেদন জমা দেয়, কিন্তু প্রকৃত আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত তথ্য অনুপস্থিত থাকে, কোনো সহায়ক দলিল থাকে না। তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখিত সংখ্যা বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না।”

বিশ্বব্যাংকের সাবেক জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, “সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোকে করের আওতায় আনা জরুরি।”

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশে ৫০টিরও বেশি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ছাত্র নেতৃত্বে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) নতুন দল গঠিত হয়েছে। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি নতুন দল নিবন্ধন পেয়েছে।

এনসিপি গঠনের পর থেকে তাদের ইফতার পার্টি এবং কিছু নেতার নিজ নিজ এলাকায় অতিরিক্ত প্রদর্শনীর অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলটি এই ব্যয়ের অর্থ কোথা থেকে এসেছে তা স্পষ্ট করেনি।

অন্যান্য বড় রাজনৈতিক দলও বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে, কিন্তু এই অর্থের উৎস সম্পর্কে কোনো সঠিক তথ্য নেই।

দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি আয়ের কথা জানিয়েছে। ইসিতে জমা দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দলটির আয় ছিল ২৭.১৫ কোটি টাকারও বেশি, আর ব্যয় ৯.৮৭ কোটি টাকারও বেশি।

দলটির আয়ের উৎসের মধ্যে রয়েছে সদস্যদের মাসিক চাঁদা, অনুদান, মনোনয়নপত্র বিক্রয়, ভাড়া এবং ব্যাংক সুদ ইত্যাদি।

অন্যদিকে, বিএনপি প্রতি বছর ইসিতে তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়। ২০২৩ সালে তাদের আয় ছিল ১১.০৮ কোটি টাকা, আর ব্যয় ৩৬.৫ কোটি টাকা।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল, বছরজুড়ে যে বিশাল ব্যয়ের কর্মসূচি পালন করে, এই আয়ের তথ্যের সঙ্গে তার মিল নেই।

প্রভাবশালীদের কতটা জবাবদিহি করা সম্ভব?

প্রশ্ন উঠেছে, কর অব্যাহতি প্রত্যাহারের পরও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রতি কর বিভাগ কতটা কঠোর হতে পারবে? বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ক্ষমতাসীন দল প্রায়শই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকে, বিরোধী দলকে শাস্তি দেওয়ার জন্য অতীতে করকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের নজির রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, “অতীতে, আয়কর কখনও কখনও বিরোধী দলের জন্য সমস্যা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছে, তবে এটি সাধারণত ব্যক্তিগত স্তরে হয়েছে, দলের জন্য নয়। রাজনৈতিক দলগুলো করের আওতায় আসলে তাদের আয়-ব্যয়ের অনিয়ম ধরা পড়বে, জবাবদিহিতা বাড়বে।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআর টাস্কফোর্সের একজন সদস্য বলেন, "করের আওতায় আসা মানে আইনত বাধ্য হওয়া, ফলে দলগুলোকে জবাবদিহি করতে হবে।"

মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের কর সুবিধাও কমতে পারে

বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, প্রধান বিচারপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের মূল বেতন এবং সম্মানীর বাইরে অন্য কোনো আয় বা সুবিধা করমুক্ত।

অথচ বেসরকারি কর্মচারী এবং সাধারণ নাগরিকদের মূল বেতনের সঙ্গে ভাতার ওপরও কর দিতে হয়।

করের ক্ষেত্রে সমতা আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদের মূল বেতন এবং সম্মানীর সঙ্গে উৎসব ভাতাও করের আওতায় আনার প্রস্তাব করেছে টাস্কফোর্স।

এছাড়াও বিচারকদের সম্মানী এবং উৎসব ভাতার উপর কর আরোপের সুপারিশও করেছে। আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি পাওয়ার শর্ত হিসেবে এনবিআরের কর নীতি বিভাগ আগামী বাজেটে এই সুবিধাগুলো কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। আগামী বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অব্যাহতি কমাতে হবে।

দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড অবলম্বনে

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.