প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল এমপিওভুক্তিতে ধীরগতি

দেশের বেসরকারি প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুলগুলোকে স্বীকৃতি ও মাসিক বেতন আদেশ (এমপিও) সুবিধা প্রদানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ধীরগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছয় বছর আগে মন্ত্রণালয় এসব স্কুলের কাছ থেকে স্বীকৃতি ও এমপিও সুবিধার জন্য অনলাইনে আবেদন আহ্বান করেছিল। ২০১৯ সালে ২,৬৯৭টি স্কুল আবেদন করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০০টি স্কুলের মূল্যায়ন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের লোগো

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে মাত্র ৭৬টি বেসরকারি প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল এমপিওভুক্ত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘বাংলাদেশ নমুনা গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যান ২০২৩’ অনুসারে, দেশে বর্তমানে ৩৫,৭৮,৭২৩ জন প্রতিবন্ধী রয়েছে। প্রতি হাজারে ২৮.২ জন কোনো না কোনো প্রতিবন্ধকতায় ভোগেন।

এমপিওভুক্ত ৭৬টি স্কুলের মধ্যে ঢাকায় ২৫টি, রংপুরে ১৭টি, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ৮টি করে, বরিশালে ৬টি, ময়মনসিংহে ৫টি, সিলেটে ৪টি এবং রাজশাহীতে ৩টি স্কুল রয়েছে। এছাড়াও, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১১টি সরকারি অটিজম স্কুল, ৭টি বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের স্কুল, ৫টি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের স্কুল এবং ১টি মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের কেন্দ্র রয়েছে।

সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ কোঅর্ডিনেশন কাউন্সিল অব স্কুলস ফর চিলড্রেন উইথ ডিস্যাবিলিটিস’-এর ব্যানারে বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা ১৮ দিন ধরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তাদের দাবির মধ্যে ছিল সকল প্রতিবন্ধী স্কুলের তাৎক্ষণিক স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তি, প্রতিবন্ধী-বান্ধব অবকাঠামো নিশ্চিতকরণ, প্রতি শিক্ষার্থীর জন্য ৩,০০০ টাকা শিক্ষা ভাতা, মিড ডে মিল, শিক্ষা সামগ্রী ও খেলার সরঞ্জাম সরবরাহ, থেরাপি সেন্টার স্থাপন এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।

কাউন্সিলের সভাপতি মো. ইলিয়াস রাজ জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ২,৭৪১টি স্কুল অনলাইনে আবেদন করেছিল, যার মধ্যে ১,৭৭২টি আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও এমপিওভুক্তি না হওয়ায় প্রায় ৬৩,০০০ শিক্ষক ও কর্মচারীরা দুর্ভোগে দিনাতিপাত করছেন।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রতিষ্ঠান ও প্রতিবন্ধিতা উপ-বিভাগ) বিজয় কৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, ২০১৯ সালে ২,৬৯৭টি স্কুল অনলাইনে আবেদন করেছিল। বেসরকারি উদ্যোগকে সহায়তা ও মান নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ‘সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০০৯’ প্রণয়ন করেছে। এর ভিত্তিতে একটি ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রথমে স্কুলগুলোর যোগ্যতা যাচাই করা হবে। যোগ্য স্কুলগুলোকে প্রথমে স্বীকৃতি এবং পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে এমপিও সুবিধা দেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, গত ছয় বছরে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা প্রায় ৩০০টি স্কুল পরিদর্শন করেছেন। মন্ত্রণালয়ের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি এসব স্কুল পরিদর্শনের কারণে মূল্যায়নে বিলম্ব হচ্ছে। সকল স্কুল পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন কমিটিতে জমা দেওয়া হবে।