আপনি পড়ছেন

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত পররাষ্ট্রনীতির কারণে কানাডা ও ইউরোপের দেশগুলো এফ-৩৫ জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটারের মতো উচ্চমূল্যের আমেরিকান অস্ত্র কেনা নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত এবং ন্যাটো জোটের প্রতি প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহের কারণে এই অস্ত্র ক্রয় কৌশলগতভাবে ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

f 35 f 16ছবি - সংগৃহীত

ট্রাম্প ঐতিহ্যগত মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে এসে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন এবং অধিকাংশ বিদেশি সাহায্য স্থগিত করেছেন। তাছাড়া, ন্যাটো সদস্যদের রাশিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার ব্যাপারে আমেরিকার প্রতিশ্রুতি নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্পের প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের বৈঠকে জানিয়েছেন যে ‘কঠিন কৌশলগত বাস্তবতা’ আমেরিকাকে ইউরোপের নিরাপত্তার ওপর প্রাথমিকভাবে মনোযোগ দিতে বাধা দিচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে, লকহিড মার্টিন-নির্মিত এফ-৩৫ এবং এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মতো উন্নত আমেরিকান অস্ত্রের বিক্রি প্রভাবিত হতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পূর্ব ইউরোপীয় ন্যাটো সদস্যরা তাদের সোভিয়েত-যুগের অস্ত্রের ভান্ডার পরিবর্তন করে পাশ্চাত্য অস্ত্র, বিশেষ করে এফ-১৬ এবং কিছু ক্ষেত্রে এফ-৩৫, কেনার দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু এখন কিছু ন্যাটো দেশ আমেরিকান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর নির্ভরতা পুনর্বিবেচনা করছে এবং স্যাব গ্রিপেন, ইউরোফাইটার টাইফুন এবং ডাসল্ট রাফালের মতো ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান কেনার কথা ভাবছে।

কানাডা, যেখানে ট্রাম্প ব্যবসায়িক যুদ্ধ শুরু করেছেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি এফ-৩৫ কেনা নিয়ে পর্যালোচনা করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বিল ব্লেয়ারকে নির্দেশ দিয়েছেন। ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে’ অন্যান্য বিকল্প আছে কিনা তা বিবেচনা করবেন ব্লেয়ার। পর্তুগালও এফ-৩৫ কেনার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করছে কারণ আমেরিকার সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল অবস্থান তাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।

এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের প্রতিটিটির মূল্য প্রায় ৮৫ মিলিয়ন ডলার এবং সহায়ক সরঞ্জাম এবং স্পেয়ার পার্টসসহ মূল্য ১৫০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এই বিমানটি গোপন আক্রমণ এবং চালনা ক্ষমতার অনন্য সমন্বয়। এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

অনেকে মনে করেন এই বিমানে একটি ‘কিল সুইচ’ থাকতে পারে যার মাধ্যমে আমেরিকা যেকোনো সময় বিমানটি নিষ্ক্রিয় করতে পারে। তবে পেন্টাগন এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে যে এফ-৩৫ একটি জোট/ সহযোগিতামূলক প্ল্যাটফর্ম এবং তারা সকল ব্যবহারকারীদের পূর্ণ কার্যকারিতা এবং সমর্থন প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে প্রযুক্তিগত আপগ্রেডের মাধ্যমেও আমেরিকা এই বিমানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

যদি অন্যান্য দেশ এফ-৩৫ কেনা থেকে বিরত থাকে তবে স্যাব গ্রিপেন, ইউরোফাইটার টাইফুন এবং ডাসল্ট রাফালের মতো ইউরোপীয় যুদ্ধবিমানের বিক্রি বৃদ্ধি পেতে পারে।

লন্ডনের কিংস কলেজের প্রতিরক্ষা বিষয়ক সিনিয়র লেকচারার এবং ফ্রিম্যান এয়ার অ্যান্ড স্পেস ইন্সটিটিউটের সহ-পরিচালক ডেভিড জর্ডান জানিয়েছেন, আগে ইউরোপীয় নেতারা মনে করতেন আমেরিকান প্রতিরক্ষা শিল্পের উপর নির্ভর করা সহজ এবং সাশ্রয়ী। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের ইউরোপ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত এই ধারণা বদলে দিতে পারে।

জর্ডান বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের অর্থ এবং সম্পদ একত্রিত করে গবেষণা ও উন্নয়ন, উৎপাদন এবং সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে, যা বিভিন্ন দেশের মধ্যে ঐকমত্যের অভাবের কারণে প্রায়ই জটিল হয়ে পড়ে। তবে তিনি মনে করেন, আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এটি সম্ভব। তিনি আরx বলেন, `ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা শিল্প তাদের প্রয়োজনীয় সবকিছু তৈরি করতে সক্ষম।'

ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ ইতিমধ্যেই তার মিত্রদের ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা ঠিকাদার এবং অস্ত্র ব্যবস্থা, বিশেষ করে ফরাসি নির্মিত রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের জন্য প্ররোচিত করার চেষ্টা করছেন।

শুক্রবার আঞ্চলিক ফরাসি সংবাদপত্রের সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে ম্যাক্রঁ বলেছেন, ‘যারা এফ-৩৫ কেনেন তাদের রাফাল কেনার প্রস্তাব দেওয়া উচিত। এভাবেই আমরা অগ্রগতি অর্জন করব।’

ইউরোপীয়রা যদি তাদের উৎপাদন বৃদ্ধি করে, তবে লকহিড মার্টিন এবং অন্যান্য আমেরিকান প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলোর মুনাফা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হবে। জর্ডান মনে করেন, ট্রাম্পের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আমেরিকান প্রতিরক্ষা ঠিকাদাররা উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘কোন পর্যায়ে তারা বলবে, ‘আমরা এটা পছন্দ করছি না, এখানে কোটি কোটি ডলার ঝুঁকির মুখে’?।’

এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য হোয়াইট হাউসের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.