জাবিতে ২৮৯ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বহিষ্কৃত, ৯ শিক্ষকসহ ১২ জন সাময়িক বরখাস্ত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গত বছরের জুলাই মাসে ছাত্র-শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ২৮৯ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কৃত করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৯ জন শিক্ষক, দুই কর্মকর্তা এবং একজন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সোমবার সকাল ১১টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৩টা পর্যন্ত প্রায় ১৬ ঘণ্টা ব্যাপী জরুরি সিন্ডিকেট সভা শেষে আজ মঙ্গলবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান।

বহিষ্কৃত সকল ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ছাত্রদের ওপর হামলায় জড়িত ছিলেন বলে জানান তিনি। পুলিশের দমন-পীড়নে সরাসরি সহায়তা করার অভিযোগে শিক্ষকদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

উপাচার্য জানান, বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের তিন ধরনের শাস্তি দেওয়া হবে: প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট বাতিল, পরীক্ষা বা ভাইভা'র অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের ফলাফল স্থগিত এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার।

এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও তদন্তের জন্য ছয়টি অনুষদভিত্তিক কমিটি গঠন করেছে। গত বছরের ১৪ থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে ছাত্রদের ওপর হামলা ও পুলিশের দমন-পীড়নে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে ৯ জন শিক্ষকসহ মোট ১৯ জন শিক্ষককে কমিটির মুখোমুখি হতে হবে।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া শিক্ষকরা হলেন - প্রাক্তন প্রো-ভিসি (শিক্ষা) মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, প্রাক্তন প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবির, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রাক্তন প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক আ.স.ম. ফিরোজ-উল-হাসান, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের প্রাক্তন ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাক্তন প্রভোস্ট অধ্যাপক ইসরাফিল আহমেদ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেদী ইকবাল, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হোসনে আরা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রাক্তন প্রভোস্ট নজমুল হাসান তালুকদার এবং জনস্বাস্থ্য ও ইনফরমেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তাজউদ্দিন সিকদার।

এছাড়াও, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের কানন কুমার সেন, ইনস্টিটিউট অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পলাশ বাহা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শফি মোহাম্মদ তারেক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের জহিরুল ইসলাম খন্দকার, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, জনপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনির উদ্দিন সিকদার, জনপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দুর রহমান, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ার খসরু পারভেজ, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহিবুর রউফ শায়বাল এবং পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ. এ. মামুনকে শুধুমাত্র কমিটির মুখোমুখি হতে হবে।

ছাত্রদের ওপর পুলিশি হামলায় সহযোগিতার অভিযোগে তদন্তকালীন সময়ের জন্য প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক নুরুল আলম এবং প্রাক্তন রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসানের পেনশন সুবিধাও স্থগিত করেছে সিন্ডিকেট।

হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে উপ-রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-২) নাহিদুর রহমান খান এবং সহকারী রেজিস্ট্রার (শিক্ষা শাখা) রাজীব চক্রবর্তীকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আরও তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সিনিয়র হল অ্যাটেনডেন্ট মোহাম্মদ মহসিন মিয়াকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল হালিমের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।