জাতিসংঘে বাংলাদেশের জুলাই অভ্যুত্থান সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেশ করলেন তুর্ক

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বাংলাদেশে গত বছরের জুলাই এবং আগস্টের ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশদ বিবরণ দিয়ে একটি তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন পেশ করেছেন। বুধবার (৫ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় জেনেভা থেকে জাতিসংঘের ইউটিউব চ্যানেলে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

ভলকার তুর্ক

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ফারহানা শারমিন ইমু ও মীর মাহমুদ রহমান উপস্থিত ছিলেন। 

ভলকার তুর্ক বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকার সংস্কার বিষয়ক অনুসন্ধান ও সুপারিশের বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপের সময় তিনি এই কথা বলেছেন। 

মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার গণঅভ্যুত্থানে হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবার, চিকিৎসক এবং বিপ্লবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজ ও সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, মূল বিষয় হলো, আমরা বিশ্বাস করি যে সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এবং তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সুসংগঠিত এবং পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ছিল। ১২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত জাতিসংঘের প্রতিবেদনে এগুলোর উল্লেখ করা হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমরা জানি যে এই বিক্ষোভ দমনের বিষয়টি সাবেক রাজনৈতিক নেতৃত্ব জানতেন এবং এতে তার সমন্বয় ও নির্দেশনা ছিল। 

জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেন, গত বছরের নভেম্বরে আমি বাংলাদেশ সফরে যাই। সে সময় একটি হাসপাতালে আমার বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। আমি দেখেছি অভ্যুত্থানের সময় কত মানুষ, বিশেষ করে তরুণ এবং শিশুরা আক্রান্ত হয়েছিল।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার প্রথম ফোনালাপের কথা উল্লেখ করে তুর্ক বলেন, ‘ইউনূস আমাকে বলেছিলেন, মানবাধিকার তার প্রশাসনের সংস্কার ও পরিবর্তনের কেন্দ্রে রয়েছে। অবশ্যই এটা কঠিন কাজ, এতে কোন সন্দেহ নেই।' 

তুর্ক জানান, এই প্রতিবেদন তৈরির সময় অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দলকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেছিল। জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে একটি বৈশ্বিক আপডেট উপস্থাপন করার সময় তুর্ক বলেন, ফৌজদারি মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা এবং সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক সহিংসতার তদন্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ গত বছর সহিংসতার এক ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। তৎকালীন সরকার একটি ছাত্র আন্দোলনকে নিষ্ঠুরভাবে দমন করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছিল। 

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, 'দেশটি এখন একটি নতুন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আমাদের সাম্প্রতিক স্বাধীন তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন এই যাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।'

এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলের অত্যাচারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সহিংসতার কিছু ঘটনা ঘটেছে যারা বহু বছর ধরে জনগণকে নিপীড়ন ও নির্যাতন করেছে। তাদের বেশিরভাগই মুসলিম সম্প্রদায়ের এবং খুব কম লোকই সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ছিল।