​​২৪ লাখ শিশুর জীবন বেঁচেছে যার রক্তে...

বিশ্বের অন্যতম রক্তদাতা তিনি। যার রক্তের প্লাজমায় জীবন বেঁচেছে অন্তত ২৪ লাখ শিশুর, অস্ট্রেলিয়ার সেই জেমস হ্যারিসন মারা গেছেন। সোমবার হ্যারিসনের পরিবার জানিয়েছে, নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি নার্সিং হোমে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যান তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

১৯৯২ সালে ৫৩৭তম বার রক্ত দেওয়ার সময় জেমস হ্যারিসন

অস্ট্রেলিয়ায় সোনালী বাহুর মানুষ হিসেবে পরিচিত হ্যারিসনের রক্তে ছিল একটি বিরল অ্যান্টিবডি, যার নাম অ্যান্টি-ডি। এই অ্যান্টিবডি এমন ধরনের গর্ভবতী মায়েদের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়, যাদের রক্ত ​​পেটের অনাগত শিশুর জন্য সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ।

হ্যারিসন ছিলেন অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিসের আজীবন দাতা। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, হ্যারিসনের ১৪ বছর বয়সে তার বুকে বড় একটি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। সে সময় অন্যের রক্ত গ্রহণের কারণে নিজেই রক্তদাতা হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

জেমস হ্যারিসন ১৮ বছর বয়সে প্রথম তার রক্তের প্লাজমা দেন এবং ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি দুই সপ্তাহে একবার প্লাজমা দান করে গেছেন। ২০০৫ সালে তিনি সর্বাধিকবার রক্তের প্লাজমা দান করার বিশ্ব রেকর্ড গড়েন এবং খেতাবটি তিনি ২০২২ সাল পর্যন্ত ধরে রেখেছিলেন।

হ্যারিসনের মেয়ে ট্রেসি মেলোশিপ বলেন, তার বাবা কোনো খরচ বা যন্ত্রণা ছাড়াই এত জীবন বাঁচাতে পেরে খুব গর্বিত ছিলেন। তিনি সবসময় বলতেন যে এটি তার কোনো ক্ষতি করছে না এবং এটি তার আপন কারো হতে পারতো।

মেলোশিপ ও হ্যারিসনের দুই নাতি-নাতনিও অ্যান্টি-ডি টিকা গ্রহণকারী। মেলোশিপ আরও বলেন, জেমস হ্যারিসন আমাদের মতো অনেক পরিবারের কথা শুনে খুশি হতেন, যারা তার রক্তদানের কারণে বেঁচে ছিলেন।

অ্যান্টি-ডি টিকা অনাগত শিশুদের ভ্রূণ এবং নবজাতককে হেমোলাইটিক রোগ বা এইচডিএফএন নামের একটি মারাত্মক রক্তের ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। মায়ের গর্ভাবস্থায় সন্তানের এই ব্যাধি দেখা দেয়।

মূলত এ রোগের কারণে মায়ের লোহিত রক্তকণিকা তার পেটের ক্রমবর্ধমান শিশুর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। এ রোগের কারণে শিশু গুরুতর রক্তাল্পতা, হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতা, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি অ্যান্টি-ডি টিকা তৈরির আগে এইচডিএফএন ধরা পড়া প্রতি দুইটি শিশুর মধ্যে একজন মারা যেত।

অস্ট্রেলিয়ান রেড ক্রস ব্লাড সার্ভিস ‘লাইফব্লাড’ নামেও পরিচিত। সংস্থাটি তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় ২০০ জনেরও কম অ্যান্টি-ডি দাতা রয়েছে। তাদের রক্তে প্রতি বছর আনুমানিক ৪৫ হাজার মা এবং শিশুর সহায়তা হয়।

হ্যারিসনের রক্তে অ্যান্টি-ডির পরিমাণ এত বেশি কীভাবে হয়েছিল তা স্পষ্ট নয়। তবে লাইফব্লাড ল্যাবে অ্যান্টি-ডি তৈরির জন্য অস্ট্রেলিয়ার ওয়াল্টার ও এলিজা হল ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল রিসার্চের সঙ্গে কাজ করছে।

গবেষকরা হ্যারিসন এবং অন্যান্য দাতার রক্ত ​​ও রোগ প্রতিরোধক কোষের প্রতিলিপি তৈরি করেছে, যাতে ল্যাবে অ্যান্টি-ডি অ্যান্টিবডি তৈরি করা যায়।

গবেষকরা আশা করছেন, ল্যাবে তৈরি অ্যান্টি-ডি একদিন বিশ্বব্যাপী গর্ভবতী নারীদের শিশুদের বাঁচাতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

লাইফব্লাডের গবেষণা পরিচালক ডেভিড আরভিং বলেন, অ্যান্টি-ডির নতুন থেরাপি তৈরি করা দীর্ঘদিন ধরেই একটি 'পবিত্র আকাঙ্ক্ষা' হয়ে দাঁড়িয়েছে।